Advertisement
E-Paper

কাঁচা বাড়ি, টোটো সম্বল, তবু উপভোক্তারদের তালিকা থেকে বাদ নাম

গ্রামের ভিতরে মসজিদ পেরিয়ে সামসুর রহমানের বাড়ি। টিনের বেড়া দেওয়া দু’টি ঘর। বাড়ির দাওয়ায় টোটো রাখা। প্রশাসনের কাছে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, সামসুরের বাড়ি পাকা।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:২১
অভিযোগ যাঁদের নামে আছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেল, তাঁদের বাড়ি কাঁচা। কারও ঘর আধভাঙা।

অভিযোগ যাঁদের নামে আছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেল, তাঁদের বাড়ি কাঁচা। কারও ঘর আধভাঙা। ফাইল চিত্র।

বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি পাকা, কারও কারও আবার গাড়িও আছে। তাই তাঁরা আবাস (প্লাস) যোজনার উপভোক্তা হওয়ার যোগ্য নন। কোচবিহার শহর থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে, চান্দামারি গ্রামের ৫৫ নম্বর বুথে সেই বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অনেক ক্ষেত্রেই ছবিটা অন্য। অভিযোগ যাঁদের নামে আছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেল, তাঁদের বাড়ি কাঁচা। কারও ঘর আধভাঙা। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া টিন কোনও রকমে সোজা করে ঘরের বেড়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই গ্রামের সে ছবি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দুই পক্ষেরই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিডিও (কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক) নৃপেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘যে সমস্ত অভিযোগ আমরা পাচ্ছি, সব খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

গ্রামের ভিতরে মসজিদ পেরিয়ে সামসুর রহমানের বাড়ি। টিনের বেড়া দেওয়া দু’টি ঘর। বাড়ির দাওয়ায় টোটো রাখা। প্রশাসনের কাছে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, সামসুরের বাড়ি পাকা। তাঁর গাড়িও রয়েছে। সামসুর বলেন, ‘‘বাড়িতে ন’জন লোক। দু’টো ঘরে থাকি। টোটো চালিয়ে সংসার চালাই। গাড়ি পাব কোথায়?’’

কিছু দূরেই আইয়ুব আলির বাড়ি। বিজেপি যে অভিযোগ জমা দিয়েছে, তাতে আইয়ুবের পাকা বাড়ি রয়েছে বলে দাবি। কিন্তু যে বাড়িটি তাঁর বলে আইয়ুবের বলে দাবি, সেটি টিনের বেড়া দেওয়া এবং কাঁচা।

গৃহকর্ত্রী মেনকা বিবি বললেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী অনেক কষ্টে টিনের বাড়ি বানিয়েছি। পাকা বাড়ি পেলে ভাল হয়।’’

গ্রামের আর এক বাসিন্দা হজরত আলি। জমি লিজে নিয়ে চাষাবাদ করেন। তাঁর বড় টিনের ঘর। ঘরের খুঁটি কংক্রিটের। বারান্দায় রান্নার জায়গা করা হয়েছে। বিজেপি দাবি করেছে, হজরতের পাকা বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। হজরতের পাল্টা দাবি, ‘‘ব্লক অফিসে গিয়েও বলেছি, ‘এসে দেখে যান, কী করে থাকি!’ সাইকেলও নেই। গাড়ি পাব কোথায়?’’

গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের মহেন্দ্র বর্মণ চান্দামারি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। তাঁর নামেও অভিযোগ করেছে বিজেপি। তাঁরও কাচা বাড়ি। মহেন্দ্রর দাবি, ‘‘জনপ্রতিনিধি হিসাবে ঘর নেব না বলেই ব্লকে জানিয়েছি। বাকি যাঁদের নাম রয়েছে আবাসের তালিকায়, প্রত্যেকেই গরিব। আবাসের উপভোক্তা হওয়ার যোগ্য।’’

তা হলে কীসের ভিত্তিতে করা হল এমন অভিযোগ?

বিজেপির চান্দামারি মণ্ডলের সহ-সভাপতি মুন্না ঝার দাবি, ‘‘স্থানীয় স্তর থেকেই অভিযোগ উঠে এসেছে। শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত বলে ইচ্ছাকৃত অভিযোগ করা হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই। প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক।’’

বিজেপির ন্যাশনাল কাউন্সিল সদস্য নিত্যানন্দ মুন্সী বলেন, ‘‘আমরা যে অভিযোগ পাচ্ছি, তা প্রশাসনকে জানাচ্ছি। এর পরে, প্রশাসন তদন্ত করবে। তবে বহু জায়গায় পাকা বাড়ি লুকিয়ে রেখে, কাঁচা বাড়ি দেখাচ্ছেন শাসকদলের অনেকে। তেমন তথ্য আমাদের কাছে আছে।’’ তৃণমূলের কোচবিহান জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের দাবি, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে বিজেপি। চান্দামারি তারই উদাহরণ।’’

Pradhan Mantri Aawas Yojna Cooch Behar BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy