E-Paper

আন্দোলনে কারা, পুলিশি অনুসন্ধান

সুন্দরবন পুলিশ-জেলায় চাকরিহারা শিক্ষকদের ফোন করে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন করা হচ্ছে স্থানীয় থানা থেকে। সিভিকদের এ কাজে লাগানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আন্দোলনে চাকরিহারাদের মধ্যে কারা রয়েছেন, তাঁদের তথ্য-তল্লাশ শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। বিজেপি এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পথে নেমেছে রাজ্যের শাসক শিবিরের একাধিক সংগঠন। পরোক্ষে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর তরফে কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ স্কুল থেকে খোঁজখবর নিয়েছে, খবর পেয়েছি। কয়েক জন শিক্ষককেও পুলিশের লোক সরাসরি ফোন করেছে। তবে আমরা ভয় পাচ্ছি না।”

যত দিন যাচ্ছে, তীব্রতা বাড়ছে ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের আন্দোলনের। কসবায় পুলিশ শিক্ষকদের লাথি-লাঠি মারার ঘটনায় আঁচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনমুখী কারা, নজর রাখছে পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের পিংবনি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, “এক দিন আগে পুলিশ থানা থেকে ফোন করে জানতে চায়, কত জন শিক্ষক ছিলেন, ওই তালিকায় (চাকরিহারা) কত জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে কত জন স্কুলে আসছেন, কত জন আসছেন না—এ সব।” কেশপুরের কাঞ্চনতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডলও বলেন, “থানা থেকে ফোন করেছিল। শুধু পুলিশ নয়, বিডিও অফিস, এসআই অফিস, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও স্কুলের একাধিক বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। পঞ্চায়েত প্রধানও ফোন করেছিলেন।” জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, “গোয়েন্দা-রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে নানা সময়ে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়।”

সুন্দরবন পুলিশ-জেলায় চাকরিহারা শিক্ষকদের ফোন করে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন করা হচ্ছে স্থানীয় থানা থেকে। সিভিকদের এ কাজে লাগানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সাগর ব্লকের চাকরিহারা এক শিক্ষক বলেন, “এক সিভিক ফোনে জানতে চান, ২০১৬ সালের প্যানেলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন, চাকরি বাতিল হয়েছে, আপনি কোনও আন্দোলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন? যেটুকু বলার বলেছি। ওই সিভিক জানান, এ সব তথ্য পুলিশকর্তারা চেয়েছেন।” প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারির কৌশল? জেলার এক পুলিশ-কর্তা বলেন, “প্রতিটি থানায় নির্দেশ এসেছে, কোন কোন এলাকায়, কত জন চাকরি হারিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।”

দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, উত্তরবঙ্গের একাধিক জায়গায় এ দিন পথে নেমে তৃণমূলের ছাত্র-যুব সংগঠন দাবি করে, বিজেপি ও সিপিএমের ‘যৌথ ষড়যন্ত্রে’ রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএমের কিছু শিক্ষক ভাবছিলেন, ডিআই অফিসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজ্যে অশান্তি ছড়াবেন। কান খুলে শুনে রাখুন, চাইলে এক দিনে আপনাদের বাংলা ছাড়া করে দেব।”

উত্তর দিনাজপুরের কর্ণজোড়ায় জেলা শিক্ষা দফতরের সামনে পাল্টা বিক্ষোভ দেখান এবিভিপির সদস্যেরা। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। পুলিশকে সবুজ চুড়ি ও হাওয়াই চটি উপহার দেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের সঙ্গে এবিভিপির সদস্যদের ধস্তাধস্তিও হয়। পূর্ব বর্ধমানে পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের। শিক্ষকদের উপরে পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগের প্রতিবাদে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বামেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির যুব মোর্চা। মেদিনীপুর শহরে বামপন্থী ছাত্র-যুব, শিক্ষক সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করে। দাবি ওঠে, ‘যোগ্য শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাও।’

শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠে এ দিন ছুটির পরে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানান শিক্ষকেরা। প্রতিবাদে শামিল একাদশ-দ্বাদশের বেশ কিছু পড়ুয়াও। বর্ধমানের ক্ষেতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও কালো ব্যাজ পরেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন কাটোয়া শহরের তিনটি স্কুলের শিক্ষিকারা।

নদিয়ায় অঞ্জনগড় উচ্চ বিদ‍্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা কালো ব‍্যাজ পরে কাজ করেন। ছুটির পরে তাঁরা মিছিল করেন। মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বুকে কালো ব্যাজ পরে ধিক্কার জানিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kasba Kolkata Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy