Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে দুই মত দুই তৃণমূল সাংসদের

এক সাংসদ বললেন, বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের উপরেই আস্থা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনই সত্য উদঘাটন করবে। অন্য আর এক জন সাংসদ বললেন, পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক হয়ে নজরদারি চালালে বর্ধমানের ঘটনা হয়তো ঘটতই না! দুই সাংসদই তৃণমূলের! প্রথম জন দলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। দ্বিতীয় জন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

এক সাংসদ বললেন, বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের উপরেই আস্থা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনই সত্য উদঘাটন করবে। অন্য আর এক জন সাংসদ বললেন, পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক হয়ে নজরদারি চালালে বর্ধমানের ঘটনা হয়তো ঘটতই না!

দুই সাংসদই তৃণমূলের! প্রথম জন দলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। দ্বিতীয় জন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা চৌধুরী। বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল যাঁর লোকসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে। বিস্ফোরণ-কাণ্ড এবং জেহাদি যোগের ঘটনায় এমনিতেই বিরোধীদের তোপের মুখে রয়েছে শাসক দল। তারই মধ্যে দলের দুই সাংসদের বক্তব্যের এমন ফারাক স্বভাবতই অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলল শাসক শিবিরে!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় পশ্চিমবঙ্গ দেশবিরোধী এবং জেহাদি কার্যকলাপের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে বলে সরব হয়েছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তারই জবাব দিতে গিয়ে সোমবার দিল্লিতে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের উপরে আস্থা রাখার কথা বলেছেন ডেরেক। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো না মানার জন্য বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। ডেরেকের অবশ্য জানা ছিল না, বর্ধমানের ঘটনায় তাঁরই দলের স্থানীয় সাংসদ কী বলেছেন!

ঈদ উপলক্ষে বীরভূমের মাড়গ্রামে গিয়ে স্বামী তথা তৃণমূল বিধায়ক নূরে আলম চৌধুরীর পাশে বসে প্রশ্নের জবাবে সাংসদ সংঘমিতা এ দিন বলেন, “ঘটনার পরে এলাকায় এখনও যাইনি। তবে বোমা তো অনেক সময় এমনিই দুষ্কৃতীরা রেখে চলে যায় পুজোর সময়। অনেকে গণ্ডগোল পাকানোর জন্যও বোমা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের আরও বেশি নজরদারি দেওয়া উচিত ছিল। তা হলে হয়তো অশুভ ঘটনা ঘটতো না!” যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার নীচের তলায় তৃণমূলের কার্যালয় ছিল বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। সংঘমিতা অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “সত্যিই যদি তৃণমূল কার্যালয় থাকত, তা হলে নিশ্চয়ই উপরে জঙ্গিদের ডেরা থাকত না! তবে এখন তো অনেক লোক নিজেদের তৃণমূল বলে দাবি করছে! কে কখন তৃণমূলের পতাকা রেখে চলে গিয়েছে, এখন সেটা তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার।”

সংঘমিতা বোমা রেখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বললেও খাগড়াগড়ের ওই বাড়িতে রীতিমতো বিস্ফোরক নিয়ে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। আর সাংসদ পুলিশের যে নজরদারির কথা বলেছেন, তা তো ছিলই না। উল্টে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি-র আরও অভিযোগ, ঘটনার অনেক তথ্যপ্রমাণও নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। এ সবের জবাব দিতে গিয়েই ডেরেক এ দিন বলেন, “বর্ধমানের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন সত্য উদঘাটন করতে পারবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আত্মবিশ্বাসী। প্রশাসনের উপরে তিনি পূর্ণ আস্থা রাখছেন। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজি-কে নিয়ে কমিটিও গড়া হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর অভিধানে আস্থা বলে কোনও শব্দ নেই!” প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজের মতো সহকর্মীদের বিশ্বাস করেন না এবং তাঁর দলের নেতারাও বর্ধমানের ঘটনায় প্রশাসনের তদন্তের উপরে আস্থা রাখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ডেরেক।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মর্যাদা ভেঙে এনআইএ-র তদন্ত নিয়ে বিজেপি হইচই করছে বলে ডেরেকের দাবি। পাশাপাশিই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সুরেই তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেই বিজেপি উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, কোনও ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত আছে মনে করলে যে কোনও রাজ্যেই এনআইএ তদন্ত করতে পারে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লঙ্ঘনের কিছু নেই।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য এ দিনও খাগড়াগড় এবং মালদহের বিস্ফোরণের ঘটনাকে এক সূত্রে বেঁধে রাজ্যের শাসক দল এবং পুলিশ-প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। রাহুলবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূল নিজেদের কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে সমাজবিরোধীদের দল হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে আগেই! তার পর বাংলাদেশের জামাতের সঙ্গে তৃণমূলের যোগের কথা প্রকাশ্যে এল। এখন জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানি উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গেও তৃণমূলের সম্পর্ক!”

তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বিস্ফোরণ, ওই বাড়িতে তৃণমূলেরই দলীয় কার্যালয় থাকার অভিযোগ করে সিপিএমের পলিটব্যুরোও এ দিন বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, ‘বর্ধমানের পুলিশ সুপার এবং রাজ্যের অন্য পুলিশ-কর্তারা যে ভাবে বর্ধমানের ঘটনা মোকাবিলা করেছেন, তাতে আরও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই তদন্তভার এনআইএ-র হাতে থাকা উচিত’। আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “বিস্ফোরণটা ঘটে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে কী ধরনের ছক চলছিল! নইলে আমরা অন্ধকারে থাকতাম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE