Advertisement
E-Paper

শাসক দলের ‘রাঙা চোখে’র সামনে অসহায় রাজ্য পুলিশ

উর্দি পরা অবস্থাতেই আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। কখনও থানার মধ্যে। কখনও বাইরে, ঘটনাস্থলে। তবু অভিযুক্তদের ধরতে পারছেন না। কারণ একটাই, তারা শাসক দলের লোক। এই অবস্থায় মনোবল যে তলানিতে ঠেকেছে, পুলিশের নিচুতলার অনেকেই সেই কথা একাধিকবার বলছেন। এমনই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি বুধবার পুলিশকে ‘পেশাদার’ হতে নির্দেশ দিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১১

উর্দি পরা অবস্থাতেই আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। কখনও থানার মধ্যে। কখনও বাইরে, ঘটনাস্থলে। তবু অভিযুক্তদের ধরতে পারছেন না। কারণ একটাই, তারা শাসক দলের লোক। এই অবস্থায় মনোবল যে তলানিতে ঠেকেছে, পুলিশের নিচুতলার অনেকেই সেই কথা একাধিকবার বলছেন। এমনই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি বুধবার পুলিশকে ‘পেশাদার’ হতে নির্দেশ দিলেন। একই সঙ্গে নির্দেশ, শাসক দলের নেতা-কর্মীরা কোনও অপরাধে যুক্ত থাকলে তাঁদের যেন রেয়াত করা না হয়।

গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু ঘটনায় নিজের পুলিশ বাহিনীকে কী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা ভাল ভাবেই জানেন ডিজি। তাই নিয়ে যথেষ্ট বিব্রত পুলিশের শীর্ষ মহল। তার জেরেই এসপি, ডিআইজি, আইজি ও এডিজি পদমর্যাদার কর্তাদের নিয়ে এ দিন ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে বৈঠক করেন ডিজি। সেখানে বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করতে অপরাধ মোকাবিলায় পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের রেয়াত না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

পুলিশের শীর্ষ কর্তার তরফে নির্দেশের যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গেল এ দিনই। বহরমপুরে এ দিন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের চাঁদার জুলুম আটকাতে গিয়ে প্রহৃত হতে হয় পুলিশকে। যদিও শ্রমিক সংগঠন ঘটনাটি মানতে চায়নি। বোলপুরে থানায় ঢুকে পুলিশের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ রয়েছে সে সুদীপ্ত ঘোষের বিরুদ্ধে, পাঁচ দিনেও তাঁকে ধরতে পারেনি পুলিশ। উল্টে তিনি এ দিন আগাম জামিনের আর্জি জানিয়েছেন। শুনানি ২২ সেপ্টেম্বর।

মালদহের মোজমপুরে ধারাবাহিক সংঘর্ষে তৃণমূল-আশ্রিত দুই দুষ্কৃতী আসাদুল্লা বিশ্বাস ও রিন্টু শেখকে ধরতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তাও বলছেন, “এক পক্ষের কাউকে ধরলেই অন্য পক্ষ চোখ রাঙাচ্ছে। কে আর সাধ করে হ্যাপা নিতে চায়!”

এর সঙ্গে যোগ করা যায় তাপস পালের বক্তৃতা মামলা। সেখানে তিনি ‘রেপ করিয়ে দেব’ বলে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই নিয়ে বুধবারও হাইকোর্ট শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে এই বলে যে, তারা তাপসকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। যা দেখেশুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “পুলিশের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিয়েছেন খোদ পুলিশমন্ত্রী। পুলিশ তাই হয় অসহায়, না হয় নির্বিকার।”

রাজ্য জুড়ে পুলিশের এই অবস্থার মধ্যেই, বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার অলক রাজোরিয়া। তিনি সম্প্রতি বলেন, “পুলিশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সকলে এর মোকাবিলা করব।” যা শুনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “ওই পুলিশ-কর্তা যা বলেছেন তা নির্মম সত্য।” অধীরের অনুমান, বক্তব্য ঘিরে জল ঘোলা হতে পারে তা অনুমান করেই ওই পুলিশ কর্তা এর পরেই বলতে শুরু করেছিলেন, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।

রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এক কর্তার মন্তব্য, “পুলিশ সাহসটা পাবে কোথা থেকে? মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যদি দলের অভিযুক্ত নেতাদের, কাউকে ভাল ছেলে, কোনও বড় অপরাধকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলে বারবার দোষ ঢেকে দেন, তা হলে পুলিশের কী করার আছে?”

তবে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ধারাবাহিক সমালোচনার মুখে পড়ে বাহিনীর রাশ শক্ত হাতে ধরার চেষ্টা করছেন পুলিশ কর্তারা। নবান্ন থেকে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য জেলার পুলিশ অফিসারদের সরাসরি নির্দেশও পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবারই পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের সঙ্গে বিজেপি-র ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের সংঘর্ষ ঠেকাতে নবান্ন থেকেই ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়েছিল জেলার পুলিশ সুপারকে।

police attack hooliganisn ruling party state news online news latest news latest news state
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy