Advertisement
২২ মে ২০২৪

ধাওয়া করে দুষ্কৃতী ধরল পুলিশ, মারে নিহত ১

এক দিকে নদী, অন্য প্রান্তে ঘন জঙ্গল। মাঝের রাস্তা দিয়ে দুদ্দাড় করে ছুটেছে মোটরবাইক। পিছু নিয়েছে পুলিশ। আচমকা ধাওয়া করা পুলিশের গাড়ির দিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল মোটরবাইকের আরোহীরা। পাল্টা জবাব দিল পুলিশও।

অঙ্কন: মণীষ মৈত্র

অঙ্কন: মণীষ মৈত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

এক দিকে নদী, অন্য প্রান্তে ঘন জঙ্গল। মাঝের রাস্তা দিয়ে দুদ্দাড় করে ছুটেছে মোটরবাইক। পিছু নিয়েছে পুলিশ। আচমকা ধাওয়া করা পুলিশের গাড়ির দিকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল মোটরবাইকের আরোহীরা। পাল্টা জবাব দিল পুলিশও। বলিউ়়ড-মার্কা এই চোর-পুলিশের দৌ়ড় থামল, যখন রাস্তার পাশের গ্রামে ঢুকে পড়ল মোটরবাইকে সওয়ার তিন জন। মোটরবাইক ফেলে পালাতে শুরু করল গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল-পথে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

লাগাতার গুলির শব্দে সতর্ক হয়ে যাওয়া গ্রামবাসী পুলিশের সঙ্গে মিলে ফের পিছু নেয় তাদের। খানিক বাদেই দু’জনকে পাকড়াও করে জনতা-পুলিশ। এক জন পালায়। পুলিশ সূত্রের দাবি, তারা কিছু করার আগেই জনতা বেধড়ক মারে ছোটু সিংহ (২৭) নামে এক সমাজবিরোধীকে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে মারা যায় বিহারের বাসিন্দা ছোটু। সোমবার এমনই ধুন্ধুমার কাণ্ড হল আসানসোলের সিদাবাড়ি এলাকায়।

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার দাবি, ‘‘ছোটু সিংহ এবং তার সঙ্গী মহম্মদ আখতার পুরনো দুষ্কৃতী। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত। আমাদের অনুমান, ওদের আর এক সঙ্গী জঙ্গলেই লুকিয়ে রয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে র‌্যাফ, পুলিশ।’’

সম্প্রতি সালানপুর, রূপনারায়ণপুর-সহ আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় একের পরে এক লুঠ, ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে মাইথন লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের সব রাস্তা, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নজরদারিতে কড়াকড়ি করেছে পুলিশ। বদ মতলবে এক দল সমাজবিরোধী এলাকায় ঢুকতে পারে— এমন খবর পেয়ে রবিবার রাত থেকে কল্যাণেশ্বরী ও মাইথনের মাঝখানে সিদাবাড়ি মোড়ে নাকাবন্দি করেছিলেন সালানপুর, রূপনারায়ণপুর থানা ও কল্যাণেশ্বরী ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে মাইথনের দিক থেকে কল্যাণেশ্বরীর দিকে যাচ্ছিল প্রায় সমবয়সী তিন জন। সন্দেহের বশে তাদের মোটরবাইক থামাতে বলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ দেখেই বড় রাস্তা ছেড়ে পাশের মোরাম-রাস্তায় নেমে পড়ে যুবকেরা। শুরু হয় তাড়া করা।

পুলিশ সূত্রের খবর, ছোটুদের ছোড়া গুলি থেকে একটুর জন্য রক্ষা পান রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির আইসি সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। একটা সময়ে রাস্তার ডান দিকে কালীপাথর গ্রামে ঢুকে পড়ে ছোটুদের মোটরবাইক। গ্রামবাসীদের বেরিয়ে আসতে দেখে স্থানীয় শান্তিনগর আশ্রমের সামনে মোটরবাইক ফেলে পাশের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। গ্রামের বাসিন্দাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলে শুরু হয় তল্লাশি। সালানপুর থানা থেকে পুলিশের আরও একটি বাহিনী সেখানে চলে আসে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ধরা পড়ে ছোটু এবং আখতার। তাদের কাছ থেকে দু’টি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

কমিশনারেটের এক পুলিশ-কর্তার দাবি, ধরা পড়তেই ছোটুকে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে জনতা। পুলিশ যতক্ষণে উদ্ধার করে, ততক্ষণে কাহিল হয়ে পড়েছে সে। প্রথমে পিঠাইকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং পরে আসানসোল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। এ দিন সন্ধ্যার সেখানেই মারা যায় সে। কমিশনার অবশ্য বলছেন, ‘‘ছোটু অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছে। ময়না-তদন্ত হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police miscreant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE