Advertisement
E-Paper

সতীপীঠে পাহারা বসিয়ে রোখা হল বিয়ে

নাবালিকা ওই পরীক্ষার্থীর বাড়ি বীরভূমের কাঁকরতলা থানা এলাকায়। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০ নাগাদ তাদের কাছে খবর আসে কাঁকরতলার এক নাবালিকার সঙ্গে বক্রেশ্বর ধামে বিয়ে হবে পশ্চিম বর্ধমানের এক যুবকের।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৮

সতীপীঠে সাতসকাল থেকে পাহারা বসিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক নাবালিকার বিয়ে রুখে দিল পুলিশ। কেন ১৮-র নীচে মেয়ের বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়, সে-সব বোঝানোর পরে প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে দু’টি অঙ্গীকার করেছেন ওই নাবালিকার বাবা-মা। প্রথমত, ১৮-র আগে বিয়ে দেবেন না। দ্বিতীয়ত, মেয়ে এ বার পরীক্ষায় বসবে।

নাবালিকা ওই পরীক্ষার্থীর বাড়ি বীরভূমের কাঁকরতলা থানা এলাকায়। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০ নাগাদ তাদের কাছে খবর আসে কাঁকরতলার এক নাবালিকার সঙ্গে বক্রেশ্বর ধামে বিয়ে হবে পশ্চিম বর্ধমানের এক যুবকের। কোনও ভাবে রাজ্যের কন্যাশ্রী দফতর এই খবরটি প্রথম পায়। সেখান থেকে খবরটি যায় কেন্দ্রীয় শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রকে। মন্ত্রক থেকেই ই-মেল মারফত সেই খবর জেলার পুলিশ সুপার, সমাজকল্যাণ আধিকারিক, চাইল্ড লাইন- সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছয়। কিন্তু, এত উঁচু স্তর থেকে আগাম খবর পেলেও মেয়েটি কিংবা পাত্রপক্ষের বিষয়ে কোনও তথ্য না থাকায় বিয়ে আটকাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে পুলিশকে।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এমনিতেই বক্রেশ্বর ধামে বিয়ের দিনগুলিতে অনেক বিয়ে হয়। তাই এ ক্ষেত্রে অন্ধকারে হাতড়ানোর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’’ তিনি জানান, সকাল থেকেই কাঁকরতলা ও দুবরাজপুর থানার পুলিশ বক্রেশ্বর ধামে পৌঁছে যায়। সতর্ক করা হয়, মন্দিরের পুরোহিত বা পান্ডাদের।
এ ছাড়া গাড়ি পার্কিং জোনের দায়িত্বে থাকা লোকজন এবং স্থানীয় হোটেল-লজের কর্মীদের বলে দেওয়া হয়, কোনও নাবালিকার বিয়ে দিতে
কোনও পরিবার এসেছে সন্দেহ
হলেই যেন তাঁরা খবর দেন পুলিশকে। এতেই কাজ হয়।

বেলা আড়াইটের নাগাদ কনে বেশে ওই নাবালিকা ও তার পরিবারের খোঁজ মেলে। সন্ধান পাওয়া যায় বিয়ে করতে আসা যুবক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও। পাত্র ও পাত্রীপক্ষের সকলকে দুবরাজপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পৌঁছে যান দুবরাজপুর ব্লকের সমাজকল্যাণ আধিকারিক আদর্শ চাকমা এবং চাইল্ড লাইনের দুই প্রতিনিধি বিপ্লব ঘোষ ও নূপুর মজুমদার।

নাবালিকার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই মেয়েটির বাবা রাজমিস্ত্রি। অবস্থা স্বচ্ছল। দুই সন্তানের মধ্যে বড় ওই নাবালিকাই। এ বারই খয়রাশোলের একটি স্কুল থেকে তার মাধ্যমিকে বসার কথা। কিন্তু বছর দুই আগে থেকে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সে কথা জানাজানি হতেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার বিকেলে দুই পরিবারকে দুবরাজপুর থানায় এনে বোঝানো হয়, বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা তো আছেই, একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে বিয়ে হলে মেয়ের শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে। তার পরেই দুই পরিবার মুচলেকা দেয়। মেয়েটিও জানিয়েছে, সে পরীক্ষায় বসবে। শনিবার শিশুকল্যাণ কমিটির (সিডব্লিউসি) কাছে উপস্থিত করা হয়েছিল নাবালিকা এবং তার বাবা-মাকে। ১৮-র আগে বিয়ে না দেওয়ার কথা পরিবারটি রাখবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে নজরদারি থাকবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে। মেয়েটি যে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় বসতে পারবে, তাতেই আমরা খুশি।’’

Child marriage Birbhum Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy