E-Paper

সাক্ষী নিরাপত্তা: প্রস্তাব পুলিশের

পুলিশ সূত্রের দাবি, কোনও সাক্ষী ভয় পেলে বা তাঁকে হুমকি দিলে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বাধীন কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। ওই কমিটিতে বিচারবিভাগের এক জন প্রতিনিধিও থাকবেন।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৪
নবান্ন।

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষীর ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু পুলিশের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্যদান থেকে বিরত থাকছেন। বিশেষ করে প্রভাবশালী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষীদের হাজির করাই রীতিমতো দুষ্কর বলে দাবি করছেন পুলিশের একাংশ। ‘ভয় দেখানোর’ ফলেই যে সাক্ষীরা বেঁকে বসছেন, এ কথাও মানছেন তদন্তকারীদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও পরিচয়ের গোপনীয়তা সুনিশ্চিত করার জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব নবান্নে পাঠিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের সদর দফতর ভবানী ভবনের আশা, প্রস্তাব মেনে নেবে নবান্ন।

তবে অনেকেই পুলিশের এই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই এ রাজ্যে পুলিশের একাংশের সঙ্গে প্রভাবশালী অভিযুক্তের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে। সে ক্ষেত্রে সাক্ষীর নিরাপত্তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি? এ হেন পুলিশের প্রতি সাক্ষীরও কি ভরসা থাকবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, অভিযুক্ত এবং পুলিশের একাংশের যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে ঠিকই। তবে সাক্ষীর নিরাপত্তা বিষয়ক জেলাস্তরের কমিটিতে বিচারবিভাগের প্রতিনিধি থাকবেন। তাই কমিটি নিরপেক্ষ হবে, এই আশা করাই যায়।

পুলিশ সূত্রের দাবি, কোনও সাক্ষী ভয় পেলে বা তাঁকে হুমকি দিলে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বাধীন কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। ওই কমিটিতে বিচারবিভাগের এক জন প্রতিনিধিও থাকবেন। সাক্ষীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তাঁকে পুলিশের ‘আশ্রয়ে’ (সেফ হাউসে) রাখা হবে। সেফ হাউস না-থাকলে কোনও গোপনীয় স্থানে তাঁকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। সাক্ষী আদালতে সশরীরে হাজির হতে ভয় পেলে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হবে তাঁর সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা।

রাজ্য পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সাক্ষী সুরক্ষার জন্য বিশেষ প্রকল্প থাকলেও এ রাজ্যে তা চালু হয়নি। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতায় (বিএনএসএস) সাক্ষীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাই এই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এর জন্য কোনও ব্যয় বরাদ্দ করা হবে কি না, সে ব্যাপারে ভবানী ভবন কিছু বলতে চায়নি।

পুলিশ সূত্রের খবর, কোনও সাক্ষী ভয় দেখানোর অভিযোগ করলেই তা প্রথমে সত্যি বলে ধরে নেওয়া হবে না। তার বদলে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে থাকা কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে সাক্ষীর বাড়িতে পুলিশ সিসি ক্যামেরা এবং রক্ষী মোতায়েন করবে। এ সবই ওই প্রস্তাবে জানানো হয়েছে। যদিও সাক্ষ্য দেওয়ার পরেও সাক্ষীর নিরাপত্তা অটুট থাকবে কি না অথবা সাক্ষীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা কী হবে, তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে।

পুলিশের একাংশের দাবি, সাক্ষীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা দেওয়ার প্রকল্প এ রাজ্যে চালু না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেরাই সাক্ষীকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। উদাহরণ হিসেবে পুলিশ দাবি করেছে, কয়েক বছর আগে মধ্য কলকাতার একটি খুনের মামলায় এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে বার তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল এবং বাড়ি থেকে কোর্টে যাতায়াতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabanna West Bengal Police West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy