Advertisement
E-Paper

‘পুলিশের পক্ষে বাড়ি বাড়ি ঢুকে নজরদারি কঠিন’! বাজি বিপর্যয় এড়াতে সচেতনতার উপর জোর পুলিশকর্তা সুপ্রতিম সরকারের

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার তৃতীয় ঘেরি অঞ্চলে বাজি বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের আট সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, ওই বাড়িতে অবৈধ ভাবে বাজি তৈরি এবং মজুত করে রাখা হত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৫
Supratim Sarkar

পাথরপ্রতিমার বাজি দুর্ঘটনা এবং অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

রাজ্যে আবার একটি বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা। এ বার প্রাণ গেল একই পরিবারের আট সদস্যের। তবে এই দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের উপরই চাপাল পুলিশ। একই সঙ্গে তারা জানাল, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি করা পুলিশের পক্ষে কঠিন কাজ। এ জন্য সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। এমন একটি ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফে যা যা করার, তা করা হবে বলে জানালেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার।

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার তৃতীয় ঘেরি অঞ্চলে বাজি বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের আট সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, ওই বাড়িতে অবৈধ ভাবে বাজি তৈরি এবং মজুত করে রাখা হত। সোমবার রাতে সেই বাড়িতেই কোনও ভাবে আগুন লাগে। এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পুলিশ টাকা নিয়ে যেত ওই বাড়ি থেকে। পঞ্চায়েতের দেওয়া ট্রেড লাইসেন্সে বাজি মজুত এবং তৈরি করত বণিক পরিবার। এই দুই অভিযোগই তদন্তসাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন সুপ্রতিম। তিনি জানান, বছর দশেক ধরে বণিক পরিবার বাজি ব্যবসা করছে। পরিবারের বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত বাড়িতে বাজি তৈরির জন্য বছর তিনেক আগে গ্রেফতার হন। কিন্তু তার পরে তিনি আবার বাজির ব্যবসা করার জন্য কি প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিলেন? পুলিশকর্তা জানান, সে নিয়ে তদন্ত চলছে।

বস্তুত, সুপ্রতিম ঘটনার দায় ওই পরিবারের উপরে চাপিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। যার মাসুল দিতে হয়েছে বাড়িরই আট সদস্যকে। যার মধ্যে রয়েছে শিশু এবং বৃদ্ধ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বা আপনি যদি বাড়িতে পেট্রল রাখি, তার পর সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখি, সেখানেই রান্না করি, সেই খবর প্রতি দিন পুলিশের কাছে থাকা সম্ভব নয়। এটা তো সচেতনতার অভাব, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়!’’

গত কয়েক বছরে রাজ্যে বেশ কয়েকটি বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানি হয়েছে। তার পর প্রশাসনকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। কিন্তু কেন একই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে? প্রশাসন কী পদক্ষেপ করছে? সুপ্রতিমের দাবি, পুলিশের তরফে সচেতন থাকার কথা সব সময় বলা হয়। বাজি বিপর্যয়ের পরে সচেতনতামূলক বৈঠক হয়েছে। পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘কিন্তু নিজেদের মধ্যে তো একটা বোধ থাকতে হবে। আমি দাহ্য পদার্থ রাখব, সেখানে শিশুদের নিয়ে থাকব, সেখানেই গ্যাস সিলিন্ডার রেখে রান্না করব— এই ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করাটা পুলিশের পক্ষে একটু কঠিন। তবু আমরা চেষ্টা করি। সামগ্রিক ভাবে আমরা সকলকেই সচেতন থাকার কথা বলি। জোর করে সচেতন করা যায় না। আইন দিয়েও হয় না। তার জন্য আমরা শুধু আবেদন করতে পারি।’’

তবে পাথরপ্রতিমার বণিক পরিবারের কারও নামে বাজি তৈরির লাইসেন্স ছিল কি না অথবা বাজি মজুত করার লাইসেন্স ছিল কি না, সে সব তদন্তসাপেক্ষ বলে জানাল পুলিশ। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম বলেন, ‘‘কোনও লাইসেন্স থাকলে তার কী ক্ষমতা, সবই তদন্তের বিষয়। পঞ্চায়েত থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। সেটাও পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাজি ব্যবসার সঙ্গে প্রচুর মানুষের পেশা জড়িয়ে। কিন্তু কোথাও সচেতনতার অভাব আমরা লক্ষ করছি। সাম্প্রতিক অতীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে।’’

পাথরপ্রতিমার ঘটনার প্রেক্ষিতে বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসবে পুলিশ। বাজি মজুত যাতে লোকালয়ে না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান সুপ্রতিম। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে বিস্ফোরণ হল, কী ভাবে আগুন লাগল, সেটা যাঁরা বলতে পারতেন, তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। তাই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করা হচ্ছে।’’

Patharpratima Firecracker Accident Firecracker Blast West Bengal Police Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy