Advertisement
E-Paper

রেললাইনে দেহ মিলল সেন্ট জেভিয়ার্সের কৃতী ছাত্রের, ইংরেজি বলতে না পারার জন্যই কি আত্মহত্যা?

বেলুড় জিআরপি জানিয়েছে, উত্তরপাড়া ও হিন্দ মোটর স্টেশনের মাঝামাঝি অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ পাওয়া গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৯
হৃষীক কোলে

হৃষীক কোলে

সিঙ্গুর থেকে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তে এসেছিলেন তিনি। তার পরে নিখোঁজ হয়ে যান হৃষীক কোলে। বৃহস্পতিবার তাঁর দেহ পাওয়া যায় বেলুড়ের কাছে রেললাইনে।

বেলুড় জিআরপি জানিয়েছে, উত্তরপাড়া ও হিন্দ মোটর স্টেশনের মাঝামাঝি অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। মাথা ও ধড় পড়ে ছিল আলাদা ভাবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃষীকের পরিবারের লোকজন দেহটি শনাক্ত করেছেন। তাঁর বাবার বক্তব্য, ছেলে শহুরে আদবকায়দা এবং ইংরেজি ভাল না-জানায় ক্লাসে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই কিছুটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

শুধু ইংরেজি ও হিন্দি ভাল না-জানা এবং শহুরে আদবকায়দার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না-পারার জন্যই কি হৃষীক আত্মহত্যা করেছেন? নাকি এটা দুর্ঘটনা? সম্ভাব্য সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রেল পুলিশ জানায়, সুইসাইড নোটে হৃষীক লিখেছেন, পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না-পেরেই তিনি আত্মহত্যা করছেন।

সেন্ট জেভিয়ার্সের অধ্যক্ষ ফাদার ডমিনিক স্যাভিও বলেন, ‘‘হস্টেল সুপারের কাছে হৃষীকের সমস্যার কথা শুনেছিলাম। তবে এই নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলার আগেই যে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাবে, সেটা ভাবতে পারেনি। আমরা মর্মাহত।’’ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোডে জেভিয়ার্সের হস্টেল থেকে বেরিয়ে হৃষীক আর ফেরেননি বলে অভিযোগ জানান ছাত্রাবাস-কর্তৃপক্ষ। পরে ওই নিখোঁজ পড়ুয়ার বাবা কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মুরলীধর শর্মার দ্বারস্থ হন।

লালবাজার সূত্রের খবর, সিঙ্গুরের অপূর্বপুরের সাধুখাঁপাড়ার বাসিন্দা বছর আঠারোর হৃষীক উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করে হুগলির একটি কলেজে ভর্তি হন। পরে জেভিয়ার্সে পদার্থবিদ্যা পড়ার সুযোগ পেয়ে কয়েক দিন আগেই এই কলেজে ভর্তি হন। রবিবার জেভিয়ার্সের হস্টেলে উঠে দু’দিন ক্লাসও করেন বলে পুলিশকে জানান তাঁর বাবা রতিকান্ত কোলে।

পুলিশ জানায়, হৃষীক বৃহস্পতিবার সকালে হস্টেলের রুমমেটকে বলেছিলেন, সহপাঠীরা ক্লাসে ইংরেজি আর হিন্দিতে কথা বলায় তিনি মানাতে পারছেন না। তার পরেই বালতি কেনার নাম করে তিনি হস্টেল থেকে বেরোন। পরে কলেজে যাননি, হস্টেলেও ফেরেননি। হস্টেল সুপার জোসেফ কুলান্ডি রাতেই হৃষীকের স্থানীয় অভিভাবক এবং সিঙ্গুরের বাড়িতে ফোন করেন। কিন্তু ওই পড়ুয়া ওই দুই জায়গায় যাননি শুনে হস্টেল-কর্তৃপক্ষ বেনিয়াপুকুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। শুক্রবার ছাত্রটির বাবা লালবাজারে গোয়েন্দা-প্রধানের কাছে গিয়ে জানান, বাংলা মাধ্যমে পড়লেও হৃষীক খুবই মেধাবী ছিলেন। অঙ্কে খুব ভাল হলেও এক শিক্ষকের কথায় জেভিয়ার্সে পদার্থবিদ্যায় অনার্স নেন।

হৃষীকের অন্তর্ধানের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ এজেসি বোস রোডে ওই হস্টেলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে হস্টেল থেকে বেরিয়ে হৃষীক বেকবাগানের দিকে যাচ্ছেন। তার পরে আর কোনও ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। তাঁর মোবাইলও বেকবাগানের পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় হষীকের দেহ শনাক্ত করে তাঁর পরিবার।

রেল পুলিশের খবর, হাওড়ায় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাটা সিঙ্গুরের ট্রেনের একটি টিকিট এবং সুইসাইড নোট মেলে ওই যুবকের পকেটে। ঘটনাস্থলে ধানবাদ আইআইটি লেখা একটি নীল ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে ছিল কিছু বই, জলের বোতল। কোনও পরিচয়পত্র মেলেনি। রেল পুলিশ ধানবাদে যোগাযোগ করে কোনও উত্তর না-পেয়ে বিষয়টি জানায় আশপাশের বিভিন্ন থানায়। হাওড়ার এসআরপি নীলাদ্রি চক্রবর্তী জানান, কোলে পরিবার যুবকের দেহ ও ব্যাগ শনাক্ত করেছেন। ব্যাগটি হৃষীকের দিদির।

St. Xaviers Student Depression Suicide Singur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy