Advertisement
E-Paper

ইটভাঁটা, আবাসন প্রকল্প থেকে পাওয়ারগ্রিড, ‘জমি হাঙর’ খুদের সন্ত্রাসে ফুঁসছে ভাঙড়

অভিযোগ, ইটভাটা এবং আবাসন প্রকল্পের জন্য কৃষকদের থেকে চারফসলী চাষের জমি ছিনিয়ে নিতে ভাঙড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে আরাবুল বাহিনী।  

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ১৫:১৫

‘জমি হাঙর’— আরাবুল ইসলামের ভাই খুদেকে গ্রামবাসীরা এই নামেই চেনেন। বাম হোক বা তৃণমূল জমানা, সব আমলেই নেতা-মন্ত্রীদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন আজিজুল ওরফে খুদে।

অভিযোগ, ইটভাটা এবং আবাসন প্রকল্পের জন্য কৃষকদের থেকে চারফসলী চাষের জমি ছিনিয়ে নিতে ভাঙড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে আরাবুল বাহিনী।

২০০৯ সালে বেদিক ভিলেজ কাণ্ডের জেরে শিরোনামে আসেন খুদে। এ বার জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির মিছিলে হাফিজুল মোল্লাকে খুনের ঘটনায় ফের নজরে তিনি। কাশীপুর থানার পুলিশ তাঁকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে। খুদের সঙ্গেই পলাতক সাজ্জাক মোল্লা, খতিব মোল্লা, কামাল বিহারী, পুত, ভজ, কাজি আকবর, রাজু, লাদেন-সহ আরাবুলের ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা। গুলিচালনার ঘটনায় এরাও অন্যতম অভিযুক্ত।

অভিযোগ, শুধুমাত্র পাওয়ারগ্রিড প্রকল্পের জন্য এই ক্ষোভ বা আন্দোলন নয়। এক দশকের বেশি সময় ধরে ভাঙড়বাসীদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে আরাবুল-খুদে। গ্রামবাসীরা এর থেকে মুক্তি চাইছিলেন। অভিযোগ, বেদিক ভিলেজ-সহ রাজারহাট, নিউটাউন এলাকার ৪টি বড় আবাসন প্রকল্পের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগই চারফসলী জমি। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, এই খুদের মদতেই চাষের জমিতে ইটভাটা বানিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হাড়োয়া, কাশীপুর থানা এলাকাতে প্রায় ১৫০ ইটভাটা রয়েছে।

জমির মাটি কেটেই ওই সব ইটভাঁটায় ইট তৈরি হয়। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের মতো এখানেও কৃষকদের একই হাল, মত জমি রক্ষা কমিটির।

আজিজুল ওরফে খুদে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভাঙরের ‘বেতাজ বাদশা’ আরাবুলের ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে। দাদার এই পরিণতি দেখে ভাই আজিজুল ইসলাম ওরফে খুদেও গা ঢাকা দিয়েছেন। এতদিন পুলিশ সব দেখেও চুপ ছিল। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর খুদে এবং তার দলবলকে গ্রেফতার করতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত, জামিন চাইলেন না আরাবুল

পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন রুখতে প্রথম থেকেই সক্রিয় খুদে। দাদার পরামর্শে গ্রামবাসীদের কখনও ভয় দেখিয়ে, কখনও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা চলেছে। খুনেরও হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পাওয়ার গ্রিড-এর জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়েছে আরাবুলের দলবল। সরকারের ধার্য কারা জমির মূল্য পাননি কৃষকেরা। এখনও অনেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাছিভাঙা গ্রামের এক কৃষক বলেন, “যে জমিতে খুদের চোখ যায়, সেটাই তার হয়ে যায়। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে না হলে, ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় খুদের দলবল। জমি দিতে রাজি হলে তবেই মু্ক্তি।” খুদের সহযোগী গফ্ফর আলি মোল্লা বেদিক ভিলেজের ঘটনাতেও গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই সময় খুদে বাংলাদেশে পালিয়ে গেলেও, পরে দাদার নির্দেশই রাজ্যে ফিরে আত্মসমর্পণ করে। তবে বেশি দিন জেলের ভাত খেতে হয়নি তাদের। ছাড়া পেয়েই, ফের জমি হাতাতে ঝঁপিয়ে পড়ে। এর পর বিভিন্ন সময়ে নিউটাউন, রাজারহাট, কাশীপুর থানায় আরাবুল বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এক সময়ে আরাবুলের ছায়াসঙ্গী কাইজার এখন বিরোধী শিবিরে। খুদে, গফ্ফর, কাইজার, কালুবাবুরা এক সঙ্গেই কাজ করেছে। এমনকী জমি রক্ষা কমিটির কয়েকজন সদস্য আগে আরাবুলের সঙ্গেই ছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলের আগে থেকেই তারা তৃণমূল সমর্থক। কিন্তু দিন দিন গ্রামবাসীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায়, তাঁরাও সরে দাঁড়ান।

ভাঙড় Bengal Panchayat Election 2018 Bhangar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy