কসবার হোটেলের ঘরে কেন খুন করা হয়েছিল আদর্শ লোসাল্কাকে? তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, অর্থই ‘অনর্থের মূল’। অর্থাৎ টাকার জন্যই খুন করা হয় আদর্শকে। তা-ও মাত্র ২,০০০ টাকা, এমনটাই বলছে পুলিশের সূত্র। সেই সূত্রের কথায়, আদর্শের সঙ্গে অভিযুক্তদের সঙ্গ দেওয়া ও টাকা বিনিময়ের কথা হয়েছিল। ওই টাকা না দেওয়াতেই বচসা শুরু হয়। তার জেরেই আদর্শকে কমল সাহা এবং ধ্রুব মিত্র খুন করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি অ্যাপের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সঙ্গে ২০ নভেম্বর আলাপ হয়েছিল আদর্শের। ২১ নভেম্বর তাঁদের কসবার ওই হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২২ নভেম্বর সেই হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় আদর্শের দেহ। ২১ নভেম্বর হোটেলের ঘরে পার্টি করেন তিন জন, সেই প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন টাকা দেওয়ারও কথা হয়েছিল। ২,০০০ টাকা তিনি দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। আদর্শ, ধ্রুব এবং কমল— তিন জনে ছিলেন একই ঘরে। অভিযুক্তদের দাবি, সেই টাকা দিতে গড়িমসি করছিলেন আদর্শ। সেই নিয়েই শুরু হয় বচসা। তার জেরেই আদর্শকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
কসবার হোটেলের ঘরে পড়ে ছিল আদর্শের দেহ। তাঁর গায়ে কোনও পোশাক ছিল না। পা ছিল বাঁধা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের পরে আদর্শের ব্যাগ থেকে দেড় হাজার টাকা এবং এটিএম কার্ড নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন কমল এবং ধ্রুব। আদর্শের মোবাইলও নিয়ে যান তাঁরা। অ্যাপের মাধ্যমে বাইক বুক করে তাতে চেপে উল্টোডাঙায় যান অভিযুক্তেরা। পরে আদর্শের এটিএম কার্ডের পিন বদলে ১১ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের সিমকার্ড নিজেদের একটি মোবাইলে ঢুকিয়ে নেন অভিযুক্তেরা। তার পরে ‘ফরগেট পিন’ করে এটিএমের নতুন পিন নেন। সেই পিনের মেসেজ যায় তাঁদের মোবাইলে, যেখানে ভরা ছিল আদর্শের সিম।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উল্টোডাঙা থেকে অভিযুক্তেরা ব্যারাকপুর, নৈহাটি, কৃষ্ণনগরে পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন। তার পরে দমদম ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে খোঁজ শুরু করে পুলিশ। রবিবার দুই অভিযুক্ত ধরা দেন থানায়। পুলিশ জেনেছে, একটি অ্যাপের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সঙ্গে ২০ নভেম্বর আলাপ হয়েছিল আদর্শের। সেই অ্যাপ নিজেদের মোবাইলে ডিলিট করেছেন অভিযুক্তেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই অ্যাপ আবার ইনস্টল করা হচ্ছে। ওই অ্যাপের মাধ্যমে আর কারও সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কসবার হোটেলে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। কে কখন হোটেলে ঢুকেছেন, কার ঘরে কে প্রবেশ করেছেন, তা জানতে ধৃতদের বয়ানের সঙ্গে ফুটেজ মিলিয়ে দেখছে পুলিশ।