Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিপজ্জনক বাড়িতেই পুলিশের কার্যালয়

মূল দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই ডান দিকে একাধিক মিটার বক্স। সেখানে মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে তার। বাঁ দিকে একটি ঘরে ডাঁই করে রাখা ভাঙা আসবাব। নড়বড়ে সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছতে হয় দোতলায়।

ভাঙাচোরা: ইট বেরিয়ে পড়েছে। কার্নিসও তথৈবচ। এমন অবস্থাতেই চলছে কাজ। কসবায়। ছবি: সুমন বল্লভ

ভাঙাচোরা: ইট বেরিয়ে পড়েছে। কার্নিসও তথৈবচ। এমন অবস্থাতেই চলছে কাজ। কসবায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে বাসিন্দারা বিপদে পড়লে দমকলের পাশাপাশি ডাক পড়ে যাঁদের, সেই পুলিশেরই কার্যালয় বিপজ্জনক বাড়িতে!

কসবা এলাকার এক বিপজ্জনক বাড়িতে বহু দিন ধরে রয়েছে বারুইপুর জেলা পুলিশের এক ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্টের (অপরাধ) কার্যালয়। ভাঙা ওই বাড়িতে কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে চাকরি করেন অন্তত সাত জন পুলিশকর্মী। তাঁদেরই এক জন মঙ্গলবার জানালেন, বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়লেও কার্যালয় বদল হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘মাথার উপরে যে কোনও দিন ছাদ ভেঙে পড়তে পারে। দু’দিন আগেই একটি টেবিলের উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে। কিছু দিন আগে এক রাতে তো বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছিল। কোনও মতে বেঁচে গিয়েছিলাম। বাড়িটা মাঝেমধ্যেই দোলে। রোজ ঢোকার সময়ে মনে হয়, এটাই শেষ দিন নয় তো!’’

কসবার আর কে চ্যাটার্জি রোডে গিয়ে এ দিন দেখা গেল, প্রায় সাড়ে তিন কাঠা জমির উপরে লাল রঙের তিনতলা একটি বাড়িই পুলিশের কার্যালয়। আগে সেখানে ছিল কসবা থানা। পরে থানা নতুন ভবনে সরানো হয়। তখন থেকেই বাড়িটি জেলা পুলিশের একটি কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, সোনারপুর এবং কাশীপুর থানা এই কার্যালয়ের অধীন। তবে বাড়ির ডান দিকের অংশে ঝোপ-জঙ্গল হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। সে দিকের বারান্দা-সহ একাংশ ভেঙে পড়েছে আগেই। বাঁ দিকের অংশেরও একই অবস্থা। তিন তলার ছাদ-সহ বাকি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। যদিও বাড়ির মূল গেটের উপরে চকচকে গ্লোসাইন বোর্ড জানান দিচ্ছে, বাড়িটি আদতে পুলিশের কার্যালয়।

মূল দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকেই ডান দিকে একাধিক মিটার বক্স। সেখানে মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে তার। বাঁ দিকে একটি ঘরে ডাঁই করে রাখা ভাঙা আসবাব। নড়বড়ে সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছতে হয় দোতলায়। দু’দিকে রয়েছে আধুনিক আবাসনের কায়দায় দু’টি ফ্ল্যাট। একটির দরজা ভাঙা। তাতেই কোনও মতে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য ফ্ল্যাটে চলে পুলিশের দফতর। সেখানেই ‘রিসেপশন’-এ ফাইলপত্র নিয়ে বসেন পুলিশকর্মীরা। ভিতরের দিকে একটি ঘর বরাদ্দ ডিএসপি-র (অপরাধ) জন্য। সেখানে ছাদের চুন-সুরকি খসে গিয়ে লোহার রড বেরিয়ে পড়েছে।

এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায় জানালেন, সত্তরের দশকে ওই বাড়ির মালিক পুলিশকে বাড়ি ভাড়া দেন। বিজনলালবাবু বলেন, ‘‘ভাড়া নেওয়ার পর থেকে পুলিশই বাড়িটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি।’’ সেই সঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘বছর দেড়েক আগে রাতে বাড়ির বাঁ দিকের অংশ ভেঙে পড়ে। মেয়রকে জানিয়ে ওই অংশ ভেঙে বিপজ্জনক বোর্ড লাগানো হয়। সেই বোর্ড হয়তো খুলে ফেলা হয়েছে। পুলিশ না চাইলে কে কী করবে?’’ এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই এলাকা আগে তিলজলা থানার অন্তর্গত ছিল। বাড়ির মালিক বড় সরকারি অফিসার ছিলেন। শান্তি ফেরাতে তিনিই বাড়িটি পুলিশকে ভাড়ায় দেন।’’

পুরসভা যেখানে বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কারের জন্য প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে ভাঙা বাড়িতে পুলিশি কার্যালয় কেন? বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাঙড়ের ঘটকপুকুরে নতুন ভবন তৈরি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া হবে।’’ যদিও বাড়ির গায়ে ‘বিপজ্জনক’ লেখা বোর্ড কোথায় গেল, তার উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Police Station Kasba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE