Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

আশীর্বাদ তো আর বিয়ে নয়, বললেন মেয়ের বাবা

খবরটা নানা জায়গা ঘুরে পৌঁছয় পুলিশ প্রশাসনের কাছেও। পুলিশ বিয়েবাড়িতে হাজির হয়ে দেখে, ছাদে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। কিন্তু মেয়ের বাবা পুলিশ দেখে আকাশ থেকে পড়েন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রথম চাউর হয় খবরটা। সেখানে এক শিক্ষিকা জানান, অশোকনগরে সতেরো বছরের এক কিশোরীর বিয়ের তোড়জোড় চলছে। কিন্তু প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে কনের সাজে বিয়ে হবে না। আরও বলা হয়, মেয়ের বাবা প্রভাবশালী মানুষ। সব জেনেশুনেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এলাকার মানুষজন।

খবরটা নানা জায়গা ঘুরে পৌঁছয় পুলিশ প্রশাসনের কাছেও। পুলিশ বিয়েবাড়িতে হাজির হয়ে দেখে, ছাদে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছে। বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। কিন্তু মেয়ের বাবা পুলিশ দেখে আকাশ থেকে পড়েন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কই, বিয়ে তো হচ্ছে না! শুধু আশীর্বাদটুকু সেরে রাখছি। আঠারো বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’

মেয়েও বাবার কথায় সায় দেয়।

পরিবারের কথাবার্তা শুনে আশ্বস্ত হন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও। তাঁদের কাছে মুচলেকা দিয়ে মেয়ের বাবা জানান, মেয়ের বয়স আঠারো না হলে বিয়ে দেবেন না।

নাবালিকা বিয়ে বন্ধে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা সচরাচর এ পর্যন্তই থাকে। কিন্তু শনিবার অশোকনগরের গ্রামে যা ঘটল, তাতে জল গড়িয়েছে ঢের দূর পর্যন্ত।

পুলিশ প্রশাসন-চাইল্ড লাইনের কর্মীরা মেয়ের বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে ফের খবর যায়, পাত্রপক্ষ ভিন্‌ জেলা থেকে এসে পড়ল বলে। যে ভাবে বিয়েটা সেরে মেয়েকে নিয়ে রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা তাদের।

এ বার অশোকনগরের ওসি অয়ন চক্রবর্তী নিজে হাজির হন ওই বাড়িতে। ঝুঁকি না নিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে তাঁরা হাজির করেন জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে।

সেখান থেকে ওই কিশোরীকে পাঠানো হয়েছে হোমে।

মেয়ের বাবা প্রভাবশালী তৃণমূল কর্মী। ধনীও। তাঁর মুখের উপরে কথা বলবেন, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার এলাকায়। ভয়ে ভয়ে আছেন হাবড়া-অশোকনগর এলাকায় কয়েক জন শিক্ষিকাও। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘কাদের মাধ্যমে খবরটা প্রশাসনের কানে উঠল, তা নাকি খোঁজখবর করছে মেয়ের বাড়ির লোকজন। কিছুটা ভয়ে আছি। তবে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে বন্ধ করতে আমরা যথাসাধ্য করব।’’

হাবড়া ২ বিডিও মনোতোষ রায়ের কথায়, ‘‘পরিবারটির উপরে আমরা নজর রাখছি। পুলিশকেও বলা হয়েছে।’’ অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়ের কথায়, ‘‘আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অনুচিত হয়েছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে না হয় দেওয়া যায় না, তা বলে কি ‘আশীর্বাদ’ সেরে রাখা যায়?

স্থানীয় গুমা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান জসমিন সাহাজি এতে অন্যায় কিছু দেখছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আশীর্বাদ মানে তো আর বিয়ে নয়। আশীর্বাদে দোষ কী!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, খবরটা তিনি জানতেন। তাঁর স্বামী শনিবার সকালে মেয়েটির বাড়িতেও গিয়েছিলেন। নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে জানতে পারলে তাঁরাও পদক্ষেপ করতেন বলে দাবি প্রধানের।

হাবড়া চাইল্ড লাইনের টিম লিডার প্রকাশ দাস অবশ্য বলেন, ‘‘আঠারো বছরের আগে বিয়ে হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। আশীর্বাদ বা পাকা দেখার মতো আচার-অনুষ্ঠানও করার কথা নয়। মেয়েটিকে বিয়ের জন্য শারীরিক-মানসিক ভাবে প্রস্তুতির জন্য সময় দিতেই হয়। আর সেটা আঠারো বছরের আগে সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage TMC Ashoknagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE