Advertisement
E-Paper

লাগাম জাতীয় সড়কের গতি-ঝড়ে

রাস্তার বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’-এ পুলিশ। কোথাও ব্যারিকেড। কোথাও যন্ত্রে গাড়ির গতি মাপা হচ্ছে তো কোথাও জরিমানা দিতে হচ্ছে চালককে! কোথায় সেই পর পর বিদেশি গাড়ির তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া?

শান্তনু ঘোষ ও দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০১:১৪
তৎপরতা: ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের নজরদারি। রবিবার, বালির কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তৎপরতা: ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পুলিশের নজরদারি। রবিবার, বালির কাছে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

একটি দুর্ঘটনা বদলে দিল ছবিটা!

রাস্তার বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’-এ পুলিশ। কোথাও ব্যারিকেড। কোথাও যন্ত্রে গাড়ির গতি মাপা হচ্ছে তো কোথাও জরিমানা দিতে হচ্ছে চালককে! কোথায় সেই পর পর বিদেশি গাড়ির তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া? রবিবারের সকালে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের এই ছবি ব্যতিক্রমী।

বহুদিন ধরেই রবিবারের সকাল মানে কলকাতা থেকে পোর্সে, বিএমডব্লু, ল্যাম্বরগিনি, জাগুয়ার, ফেরারি-র মতো বিদেশি গাড়ির গতির ঝড় তুলে বেরিয়ে পড়া। দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে প্রথমে মুম্বই রোড ধরে দৌড়। তার পরে ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে গতি বাড়াত ‘সুপার-কার’। ‘ফিনিশিং পয়েন্ট’ সাধারণত হতো হুগলির গুড়াপের একটি ধাবা। গাড়ির দৌড় দেখতে ডানকুনির মাইতিপাড়া, সিঙ্গুরের রতনপুর, দাদপুরে ভিড়ও হতো। কিন্তু গত রবিবার শলপে ফেরারি দুর্ঘটনার পর এ বার সেই গতিতে লাগাম পরাল পুলিশ। কিন্তু এ দিনের ‘বজ্র আঁটুনি’ কতদিন বজায় থাকবে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

জাতীয় সড়কে গতির ‘ঝড়’ রুখতে রাজ্যের শীর্ষ ট্র্যাফিক কর্তার নির্দেশ মতো রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২ নম্বর জাতীয় সড়কের হাওড়া ও হুগলির সীমানার মাইতিপাড়ায় ‘চেকিং’ চালায় বালি ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ। পুলিশ জানায়, সিট বেল্ট না-বাঁধা, তিনজন মোটরবাইকে সওয়ার হওয়া, হেলমেট না-পরা—এই তিনটি আইন ভাঙায় ৪৩ জনকে আটক করে ‘কেস’ দেওয়া হয়েছে। এ দিন কোনও বিদেশি গাড়ির ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড় দেখা যায়নি।

সিঙ্গুর থেকে ডানকুনি— দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেও পুলিশ নজরদারি চালায়। সিঙ্গুরে গাড়ি পরীক্ষা করা হয়। বেপরোয়া গতির অভিযোগে কয়েকটি গাড়ির চালককে জরিমানাও করা হয়। সকালে চন্দননগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা নজরদারি চা‌লান ডা‌নকুনি টোলপ্লাজায়।

ফেরারি দুর্ঘটনার পর থেকেই জাতীয় সড়কে বিদেশি গাড়ির দৌড়াদৌড়ি চোখে পড়েনি বলে দাবি প্রাক্তন কার র‍্যালি বিজয়ী ভরত পারেখেরও। তিনি নিয়মিত ওই পথে ব্যান্ডেলে কারখানায় যান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে ওঁদের দেখতে পাচ্ছি না। মনে হয় এখন মাস দুয়েক বেরোবে না।’’ তবে, জাতীয় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের গাড়ির গতি আটকানোর প্রচেষ্টা ভাল সমাধান নয় বলেই মনে করেন ভরত। তাঁর মতে, এতে গতি কমে যানজট বাড়বে। ফেরারি দুর্ঘটনায় মৃত শিবাজী রায়ের বন্ধু অতুল সুরানাও জানান, এ দিন তাঁরা বেরোননি। তিনি বলেন, ‘‘সকলের মন খারাপ। অনেকেই দুর্ঘটনায় জখম আমার ভাইঝির (আসনা সুরানা) জন্য অধিকাংশ সময় হাসপাতালে এসে বসে থাকছেন।’’

তবে, পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেও সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সিঙ্গুরের রতনপুর মোড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী ‘লেন’-এ তীব্র গতিতে যেতে দেখা যায় অন্তত পঁচিশটি রয়্যাল এনফিল্ডকে। আরোহীদের মাথায় হেলমেট, গায়ে জ্যাকেট, পায়ে স্নিকার্স, নি-ক্যাপ, হাতে গ্লাভস, চোখে রোদচশমা। উল্টো দিকে ‘লেন’-এ তখন গাড়ির গতি পরীক্ষা করছে পুলিশ। বাইক-আরোহীদের অবশ্য কাউকে ধরা হয়নি। পুলিশের একাংশের দাবি, ওই আরোহীরা নিয়ম এবং নিরাপত্তা বিধি মেনেই বাইক চালাচ্ছিলেন। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের দাবি, ‘‘ওখানে কোনও বাইক-রেস হয়নি। এক সঙ্গে অনেকগুলো মোটরবাইক যেতেই পারে। গতি বেশি থাকলেই জরিমানা করা হয়।’’

কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও এ দিন কোনও বিদেশি গাড়ির দৌড় দেখতে না-পেয়ে হতাশই হলেন সিঙ্গুরের ঘনশ্যামপুরের বাসিন্দা রাজেশ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘বছর খানেক ধরে প্রতি রবিবার আসি। এত পুলিশ আগে দেখিনি।’’ গতিতে লাগাম পরাতে পেরে পুলিশ অবশ্য স্বস্তিতে। নজরদারি এবং অভিযান জারি থাকবে বলে জানিয়েছে তারা।

তথ্য সহায়তা: প্রকাশ পাল

Durgapur Expressway Reckless Driving Safe Drive
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy