অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূলের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
আবাসিক কিশোরীদের যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত হোমের কর্ণধার দিলীপ মোহান্তকে ধরতে পুলিশের একটি দল দিল্লি গিয়েছে।
গত রবিবার ঘটনার বিষয়টি আঁচ করে দিলীপবাবু বালুরঘাট থেকে দিল্লির বাড়িতে চলে যান বলে অভিযোগ। এর পরই পুলিশের একটি দলকে মঙ্গলবার দিল্লি পাঠানো হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলছি না। তবে শীঘ্রই অভিযুক্ত ধরা পড়বে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে বালুরঘাটের চকভবানীর মালোপাড়া এলাকায় অভিযুক্ত দিলীপের বাড়ির মূল দরজা খোলা দেখে পুলিশ তল্লাশিতে গিয়ে ফিরে আসে। দিলীপ ওই বাড়িতে না থাকলেও মূল গেটের চাবি এলাকার এক মালিকে গাছে জল দেওয়ার জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই মালির কাছে ঘরের চাবি ছিল না। এর পর মূল গেটে তালা লাগিয়ে পুলিশ চলে আসে। অভিযোগ, ওই বাড়িতে নিয়মিত হোমের আবাসিক বালিকা থেকে কিশোরীদের নিয়ে গিয়ে যৌন নিগ্রহ করত দিলীপ। বাড়ির প্রতিটি ঘরেই সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। ওই বাড়িতে যাতায়াতকারী প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তির ছবি তাতে ধরা আছে কি না, এই সব প্রশ্নের উত্তর খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করেই ঘরগুলি তল্লাশি করা হবে বলে পুলিশ ঠিক করেছে। এ দিকে আবাসিক কিশোরীদের যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত দিলীপকে গ্রেফতারের দাবিতে এ বার রাস্তায় নেমে সরব হয়েছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বালুরঘাটে টাউন তৃণমূল কমিটির পক্ষ থেকে পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার নেতৃত্বে মহিলা কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। চয়নিকাদেবীর সঙ্গে ওই মিছিলে পুরসভার মহিলা কাউন্সিলরেরাও ছিলেন। গ্রেফতারের দাবিতে তাঁরা স্লোগান দেন।
বাম আমলে ওই হোমের কিশোরীদের উপর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। তৎকালীন আরএসপি নেতা তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল থেকে তৃণমূলের মহিলা নেতৃত্ব জবাবদিহি দাবি করেন। এ দিন জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, ‘‘হোমের কর্ণধারের বাড়িতে দিনের পর দিন ওই কুকীর্তি প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের একাংশের মদত ছাড়া সম্ভব বলে বলে মনে হয় না। অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের সকলকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।’’
তৃণমূলের টাউন সভাপতি অসিত রায় জানান, ২০০৬ সালে হোমের কর্ণধার দিলীপের বিরুদ্ধে আবাসিক কিশোরীদের উপর যৌন নিগ্রহের অভিযোগের আঁচ পেয়েছিলেন তৎকালীন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক। হোমের মেয়েদের বাঁচাতে তিনি রাতারাতি ২০ জন কিশোরীকে মালদহের সরকারি হোমে স্থানান্তরিত করে দেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই আধিকারিককে বালুরঘাট থেকে হাওড়া হোমে বদলি হতে হয়। তৎকালীন বিভাগীয় মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী দিলীপকে বাঁচাতে ওই নির্দেশ দেন। এই প্রসঙ্গে বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার কথা মনে নেই। কিছু বলতে পারব না।’’
এ দিন তৃণমূলের তরফে হোমের সম্পর্কে প্রশাসনিক তদন্ত করে অনুমোদন বাতিলের পাশাপাশি আবাসিক কিশোরীদের রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের এ দিনের আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেছে বামেরা। আরএসপির জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বিমলে সরকার বলেন, ‘‘গত চার বছর ধরে শাসক দল কেন চুপ করেছিলেন? কেনই বা হোমে নিয়মিত নজরদারি হয়নি। তাদেরই হাতে তো এখন পুলিশ ও প্রশাসন রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy