কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা নেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল বছর সতেরোর মেয়েটি। মাস খানেক পর হঠাৎই ফোন করে সে বাড়িতে জানায়, দিল্লির এক যৌনপল্লিতে রয়েছে সে। উদ্ধার হওয়ার পরে জানা যায়, পরিচিত এক যুবক বিক্রি করে দিয়েছিল তাকে!
পড়শির খপ্পরে পড়ে অনেকটা এ ভাবেই নিখোঁজ হয়েছিল ক্যানিংয়ের এক কিশোরীও। তাকেও দিল্লিতে যৌন ব্যবসায় নামানো হয়। মাস আটেক পরে দিল্লি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পাতিপুকুরের এক কিশোরীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ক’দিন আগেই পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট।
পুলিশের একাংশই মেনে নিচ্ছে, রাজ্যে নারী পাচার বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের উদ্ধার করা গেলেও পাচারকারীদের ধরা যাচ্ছে না। পুলিশ ও অন্যান্য নারী পাচার বিরোধী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতিকেই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী করছেন কর্তারা।
এই সমন্বয়ের ঘাটতি মেটাতেই এ বার সাহায্য নেওয়া হবে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মোবাইল মেসেঞ্জার সার্ভিসের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই এই ব্যবস্থা চালু হবে। পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী, রেল এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ওই মেসেঞ্জার সার্ভিসের আওতায় আনা হবে। প্রত্যেকটি রাজ্যে এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলেছে দিল্লি।
কী ভাবে কাজ করবে এই নতুন ব্যবস্থা?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ তৈরি করা হবে। প্রতি রাজ্য থেকে এক জন করে পুলিশকর্তা সেই গ্রুপের সদস্য থাকবেন। থাকবেন নারীকল্যাণ মন্ত্রক, বিএসএফ, রেল ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারাও। এ বার কোনও রাজ্য থেকে কিশোরী বা তরুণী নিখোঁজ হলে তার ছবি ও বিবরণ ওই গ্রুপে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার ফলে সমস্ত রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই ঘটনা সম্পর্কে সজাগ হয়ে যাবে। সতর্ক হবেন রেলকর্তারাও। ফলে পাচার হওয়ার আগেই মেয়েটিকে উদ্ধার করার করা সম্ভব হবে এবং পাচারকারীকেও হয়তো হাতেনাতে পাকড়াও করা যাবে।
রাজ্যের এক পুলিশকর্তা ব্যাখ্যা দিলেন ধরা যাক, হাবরা থেকে কোনও মেয়ে নিখোঁজ হল। তার পরেই মেয়েটির ছবি ও বিবরণ গ্রুপে চলে যাবে। সব পক্ষের কাছেই তাকে নিয়ে তথ্য থাকায় হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে ওঠার আগেই মেয়েটিকে উদ্ধার করার সম্ভাবনা থাকছে। এ রাজ্যে না হলে ভিন রাজ্যের স্টেশনে বা চলন্ত ট্রেনেও তাকে উদ্ধার করা যেতে পারে। অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশেও নারী পাচারের ঘটনা ঘটছে। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে বিএসএফ বা গোয়েন্দারাও হাতে তথ্য পেলে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের দাবি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব সুরেশ কুমার বলেন, “দিল্লিতে ইতিমধ্যেই পুলিশ অফিসারদের মধ্যে এই ধরনের গ্রুপ রয়েছে। আমরা সব রাজ্যকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বলেছি। এতে অনেক বেশি সুবিধে হবে।” এমনিতেই দেশ জুড়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। স্মার্টফোন প্রযুক্তির সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেঞ্জার সার্ভিস। দল বেঁধে গল্প করা বা কর্পোরেট অফিসে কাজের ক্ষেত্রেও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ব্যবহার বাড়ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের কথায়, “আমরাও পুরনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আধুনিক হতে চাইছি।”
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক উৎসাহী হলেও এ রাজ্যের পুলিশের অনেকেই কিন্তু নতুন প্রযুক্তিকে সে ভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন না। সিআইডি-র ‘অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং’ বিভাগের ইন্সপেক্টর শর্বরী ভট্টাচার্য বলেন, “নতুন প্রযুক্তি ভাল। কিন্তু এতে লাভ কতটা লাভ, এখনই বলা যাবে না।” কেন এমন বলছেন তিনি? শর্বরীদেবীর বক্তব্য, “এ রাজ্যের থানার হাত থেকে তদন্তভার সিআইডির হাতে আসতেই বছর ঘুরে যায়। সে ক্ষেত্রে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কতটা এগোবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” আশাবাদী পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন, পাচার ঠেকানোটাই প্রধান লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার কাজে লাগতেই পারে!