জেলমুক্তির খুশি হল ক্ষণস্থায়ী। সোমবার বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা পরিযায়ী শ্রমিক সোনালি বিবি-সহ ছ’জনের জামিন হল ঠিকই বাংলাদেশের আদালতে। কিন্তু, জেল থেকে বেরোনোর পরে রাতেই ফের পুলিশ সোনালিদের তুলে নিয়ে গেল থানায়। কেন তাঁদের আটক করা হল, এখনও তা স্পষ্ট নয়। তবে, সোনালিদের আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে বলে সূত্রের খবর।
সব মিলিয়ে এ দিন বাংলাদেশে সোনালিদের জামিন এবং এ দেশে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের পরে সোনালিদের ভারতে ফেরার যে আশা করছিলেন পরিজন, সে আশায় ফের সংশয়ের মেঘ ঘনাল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সোনালিদের সাহায্য করতে বাংলাদেশে যাওয়া বীরভূমের যুবক মফিজুল শেখের সঙ্গে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ওদের আবার থানায় গিয়েছে। কিন্তু, কেন তা জানতে পারিনি।’’ অথচ কয়েক ঘণ্টা আগেও পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। এ দিন দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সোনালি বিবিদের জামিন মঞ্জুর করেন। অন্য দিকে, এ দিনই সোনালিদের বিষয়ে মানবিকতার খাতিরে কী করা যেতে পারে, তা কেন্দ্রীয় সরকারকে দেখতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।
বাংলাদেশের আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, সোনালিরা ভারতীয়। অনুপ্রবেশের অপরাধ করলেও সোনালি অন্তঃসত্ত্বা, সঙ্গে আরও এক মহিলা এবং তিন নাবালক থাকায় জরিমানা করে তাঁদের জামিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিচারক। প্রায় ১০০ দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি থাকার পরে এ দিন সন্ধ্যায় মুক্তি পান সোনালিরা। আদালত ফের বুধবার মামলাটি শুনবে। সন্ধ্যার দিকে সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সোনালি ও সুইটি আবেদন করেন, ‘‘আমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’ সোনালি বলেন, ‘‘গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম যেন নিজের দেশেই হয়।’’ সুইটিও জানান, এখানে খুব সমস্যা হচ্ছে। জামিন পাওয়ার জন্য মমতা ও অভিষেককে ধন্যবাদও জানিয়েছেন সোনালিরা। একই সঙ্গে তাঁরা অভিযোগ করেন, শুধু বাংলায় কথা বলায় দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, সোনালি বিবিদের ভারতীয় নাগরিকত্বের কিছু নথি যখন মিলছে, তখন তাঁদের কথা শুনতে কেন অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থা নিয়ে ভারতে ফেরানো হচ্ছে না? এ দিন প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রকে দেখতে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা সোনালিকে মানবিকতার খাতিরে ফিরিয়ে এনে সীমান্তের কাছে কোনও হাসপাতালে রাখা যায় কি না। ভদু শেখের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে জানান, সোনালির সঙ্গে তাঁর আট বছরের ছেলেও জেলে আটকে ছিল। কেন্দ্র যেন সে কথাও মাথায় রাখে।
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সরকারের সঙ্গে কথা বলে বক্তব্য জানাবেন। তবে, কোনও একটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কিছু নির্দেশ দিলে, তা দৃষ্টান্ত হতে পারে। সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের পর্যবেক্ষণের পরে, সোনালিরা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, সে সম্পর্কে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন খোঁজ নিয়েছে। কোর্ট বুধবার শুরুতেই মামলাটি শুনবে।
বীরভূমের মফিজুল এ দিন আদালতে ছিলেন। সোনালি যে অন্তঃসত্ত্বা, বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের তরফে সেই রিপোর্ট আদালতে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশের নাগরিক ও মফিজুলের বন্ধু ফারুক আলি এজলাসে সোনালিদের জামিনদার হিসেবে ছিলেন। জামিনের পরে ফারুকের বাড়ির কাছেই ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সোনালিদের জন্য। জেল থেকে বেরিয়ে সেখানেই উঠেছিলেন ছ’জন। কিন্তু, রাতে ফের সেখানে হাজির হয় স্থানীয় পুলিশ। সোনালিদের ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। এই অবস্থায় নতুন করে ফের সোনালিদের গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমস্যা বেশি আসন্ন প্রসবা সোনালিকে নিয়ে। যে কোনও সময়ে তাঁর প্রসব হবে। এমন শারীরিক অবস্থায় সোনালিকে ফের গ্রেফতার করা হলে বা সংশোধানাগারে যেতে হলে কী হবে, ভেবেই দুশ্চিন্তায় পরিবার।
সোনালি বিবি-সহ ৬ জনকে জুনে দিল্লি পুলিশ ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে দিল্লি থেকে ধরেছিল। ‘পুশ ব্যাক’ করার সময়েই সোনালি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দেয়। কেন্দ্র তা না মানায় হাই কোর্ট আদালত অবমাননার মামলা করার নির্দেশ দেয়। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্র। রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে সোনালিদের ফেরাতে বলেছে। বাংলাদেশেও জামিন হল ওঁদের।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)