রামনবমীর মিছিলে অশান্তির জেরে রাজ্যে শাসক ও বিরোধীর চাপানউতোর অব্যাহত। বস্তুত শনিবার ওই ঘটনায় একাধিক মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির’ অভিযোগে আঙুল তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। তৃণমূল কংগ্রেসও পাল্টা বলেছে, বিজেপিই ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্যে ‘হিংসার রাজনীতি’ করে।
এরই মধ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তবে একটু ‘আলাদা’ সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতির অভিমত, রাজ্যপাল নিশ্চয় মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের কথা বলে ওই ঘটনার সুরাহা করবেন।
এ দিন দিল্লিতে বিজেপির সদর তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের জাতীয় মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বাঁচাতে আর একটি সম্প্রদায়কে অপমান করছেন। তাঁর ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’ রাজ্যে এসে এ দিনই তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেলও এ দিন বলেন, ‘‘রাম নবমীর দিন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়েছে।’’ যদিও অস্ত্র হাতে মিছিল করার প্রসঙ্গ এড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের (বিজেপি) লোকেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করেছে।’’ শিলিগুড়িতে জি ২০ বৈঠকে যোগ দিতে এসে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডিও বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের দেখার কথা। প্রশাসনের তরফে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি।’’
বিরোধী বিজেপির এই অভিযোগের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘বিভাজনের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি যাঁদের পরিচয়, তাঁরা মমতার দিকে আঙুল তুলছেন! সারা দেশে বিজেপিই তো এই রকম ঘটনায় উস্কানি দিচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘গুজরাতের হিংসার ঘটনা সামনে আনার জন্য সংবাদমাধ্যমকে যে ভাবে শাসক বিজেপির প্রতিহিংসার মুখে পড়তে হয়েছে, মানুষ তা দেখেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বিজেপির কাছ থেকে দায়িত্ব- কর্তব্য শিখতে হবে না।’’
অশান্তির পরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সংবিধান রক্ষা করতে গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীশ ধনখড়কে তৎপর হতে দেখেছি। কপ্টারে চড়ে আর্ত মানুষকে বাঁচাতে ছুটে যেতে দেখেছি ধনখড়কে। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীশ ধনখড়ের মতো ভূমিকা তো তিনি (আনন্দ বোস) এখনও পর্যন্ত নেননি।’’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমান রাজ্যপাল কি করবেন সেটা তাঁর বিষয়। আমার কিছু অপছন্দ হলে তা বলার জায়গা আছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে সুরাহা করবেন বলে আশা করছি। দোষীরা শাস্তি পাবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিআইডি-তদন্ত আমরা মানি না। সেখানকার মানুষই এনআইএ-র তদন্ত চাইছেন।’’
বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘শুনলাম, হাওড়ার ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই হতাশা থেকেই শুভেন্দু এ সব বলছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)