Advertisement
E-Paper

বোমাবাজি চলছেই, অশান্ত ধরমপুর

রাজনৈতিক সংঘর্ষে বিরাম নেই। বোলপুর মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে তাণ্ডব চলছে অবাধেই। এ বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইলামবাজার থানার ধরমপুর পঞ্চায়েতের আকোনা গ্রাম লাগোয়া দেলোরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০১:৩৬
এই পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। বুধবার পুড়ে ছাই সেটিই। —নিজস্ব চিত্র।

এই পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। বুধবার পুড়ে ছাই সেটিই। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনৈতিক সংঘর্ষে বিরাম নেই। বোলপুর মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে তাণ্ডব চলছে অবাধেই।

এ বার উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইলামবাজার থানার ধরমপুর পঞ্চায়েতের আকোনা গ্রাম লাগোয়া দেলোরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেখানে বিজেপি-র একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও গ্রামে ঢুকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বোমাবাজি-লুঠপাটেরও অভিযোগ উঠেছে। এ বারও অভিযোগের তির শাসকদল তৃণমূলেরই দিকে।

বুধবার সকালে থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর-এ এ বারও অভিযুক্ত একাধিক খুন-হামলা-সহ অপরাধমূলক ঘটনায় নাম থাকা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী শেখ হাবল। বিজেপি-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথারীতি অভিযুক্ত ২৫ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে এ দিন ওই গ্রামে তদন্তে যাওয়া পুলিশের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকাবাসী। এই মুহূর্তে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ টহলদারি বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ। কিন্তু, বছর পার হলেও কেন অশান্ত পাড়ুই-বোলপুর-ইলামবাজার থানা এলাকায় শান্তি ফেরাতে পারছে না পুলিশ? পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মুখে কুলুপ পুলিশের অন্য কর্তাদেরও।

ঘটনা হল, দিন পনেরো ধরে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। বার কয়েক দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বোমাবাজি এবং একে অপরের দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এই হাবল এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধেই বাড়ি ফেরার পথে দেলোরার বিজেপি কর্মী শেখ বোরহানকে গুলি করে খুনের চেষ্টার অভিযোগও উঠেছিল। এমনকী, শাসকদলের ওই কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এলাকার বিজেপি পরিবারের বধূর শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে। এলাকায় সন্ত্রাসে জড়িতদের ধরার দাবিতে দলের বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিজেপি-র এক প্রতিনিধি দল থানায় গিয়ে কথাও বলে এসেছিল। কিন্তু, এলাকায় সন্ত্রাসের ছবিটা বদলায়নি। অভিযুক্তদেরও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দুষ্কৃতীদের সাহস যে উত্তরোত্তর বাড়ছে, ফের তার প্রমাণ মিলেছে মঙ্গলবার রাতের তাণ্ডবে।

“বিজেপি-র সংগঠন ক্রমশ মজবুত হচ্ছে। দলে দলে মানুষ বিজেপি-তে চলে আসায় তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
তার জন্যই তারা এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করছে।” —চিত্তরঞ্জন সিংহ। বিজেপি জেলা সম্পাদক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গভীর রাতে বোমা ও গুলি ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢোকে। অভিযোগ, প্রথমেই গ্রামের বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরানো হয়। তার পরে একে একে হামলা হয় বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে। এ দিন সকালে থানায় অভিযোগ জানাতে এসে দেলোরার পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা তথা বিজেপি কর্মী শেখ বোরহান বলেন, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ আচমকা বোমার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই দলীয় কর্মী শেখ জামালের বাড়িতে পর পর তিনটি বোমা ছোড়া হয়। বোমার শব্দে জামালের স্ত্রী কুবেরা বিবি অজ্ঞান হয়ে যান। লাগোয়া সাবের আলি ওরফে বাবুর বাড়িতেও দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়। সেখানেও বোমাবাজি-লুঠপাটের তাণ্ডব চলে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, দলীয় কার্যালয় পোড়ানোর পরে দুষ্কৃতীরা তাঁর দোকানের টিভি, ফ্রিজ, গ্যাস সিলিন্ডার-সহ নানা আসবাবপত্র ও টাকাপয়সা লুঠ করেছে। রাতের হামলায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ হাবল এবং তার শাগরেদরাই জড়িত বলে বোরহান তাঁর লিখিত অভিযোগ দাবি করেছেন।

ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের বক্তব্য, ‘‘পাড়ুইয়ের মতোই ইলামবাজার থানা এলাকাতেও বিজেপি-র সংগঠন ক্রমশ মজবুত হচ্ছে। দলে দলে মানুষ বিজেপি-তে চলা আসায় তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তার জন্যই তারা এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করছে। খুন, বোমাবাজি, লুঠপাট— এমনকী, মহিলাদের সম্ভ্রমহানি করতেও পিছপা হচ্ছে না।’’ তাঁরও অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতের মতোই সাম্প্রতিক একাধিক অপরাধের ঘটনায় তৃণমূল নেতা শেখ হাবল এবং তার সঙ্গীদের নাম থাকলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে পরোক্ষে মদত পেয়েই তৃণমূল বারবার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা করার সাহস পাচ্ছে বলেও তাঁর দাবি।

এ দিকে, বহু চেষ্টা করেও অভিযুক্ত হাবলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, বিজেপি-র তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলামের বক্তব্য, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। বিজেপি-ই আমাদের একাধিক কার্যালয় পুড়িয়েছে। ঘরবাড়ি লুছ করেছে, প্রচুর কর্মী-সমর্থক আক্রান্ত হয়েছে। এটা বিজেপি-র নোংরা রাজনীতির আরও একটি অধ্যায়। আসলে নাটক করে খবরের শিরোনামে থাকতে চাইছে ওরা।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, শান্ত এলাকা নতুন করে অশান্ত করতে চাইছে বিজেপি। তার জন্য দুষ্কৃতীদের রীতমতো টাকা দিয়ে পোষা হচ্ছে বলে তৃণমূলের দাবি।

Illambazar Political clash Trinamool Bomb BJP Shek Habal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy