E-Paper

নজর কেবল মুসলিমে নয়, প্রস্তুতি-সতর্কতা সিপিএমে

আগামী বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে রাজ্যে বেশ কিছু আসনকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করছে সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, প্রথম তালিকায় থাকা কেন্দ্রগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে বেশি জোর দেওয়া হবে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২৭

—প্রতীকী চিত্র।

ভোটের পাটিগণিত এক রকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু শুধু সেই ইঙ্গিত ধরে এগোলে রাজনৈতিক রসায়ন গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা! বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তাই মেপে এগোতে হচ্ছে সিপিএমকে!

আগামী বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে রাজ্যে বেশ কিছু আসনকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করছে সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, প্রথম তালিকায় থাকা কেন্দ্রগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে বেশি জোর দেওয়া হবে। রাজ্যে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বাম এবং তাদের সঙ্গী কংগ্রেসের ভাল ফল হয়েছিল যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে, তার সবই প্রায় উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলার একাংশে ছড়িয়ে। এর মধ্যে কংগ্রেস এগিয়েছিল ১১টি বিধানসভা আসনে, সিপিএম এগিয়েছিল মুর্শিদাবাদের রানিনগর কেন্দ্রে। বাম-কংগ্রেসের তুলনামূলক ভাল ফলের এই গোটা এলাকাই মুসলিম-অধ্যুষিত। বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে এই সূত্রেই।

সাম্প্রতিক কালে প্যালেস্টাইনে ইজ়রায়েলের হামলা থেকে শুরু করে ভিন্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা-সহ যে সব প্রশ্নে সিপিএমকে জোরালো ভাবে পথে নামতে দেখা গিয়েছে, তার সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে ‘মুসলিম স্বার্থ’ জড়িয়ে গিয়েছে। যাকে হাতিয়ার করে বামেদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। সিপিএমের অন্দরে একাংশের আশঙ্কা, সাম্প্রতিক অতীতের ভোটের ফল বিচার করে মুসলিম-অধ্যুষিত আসনে যদি বেশি নজর চলে যায়, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ওই অংশের মতে, তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় অংশই ভেবে নিতে পারেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী হিন্দু ভোট সবই বিজেপির জন্য থাকছে! তখন আবার বিজেপিকে দূরে রাখতে চেয়েই সংখ্যালঘুরা এককাট্টা হয়ে বিধানসভায় তৃণমূলকে সমর্থন করতে পারেন। তাই সিপিএমকে কৌশল সাজাতে হবে অস্ত্রের দুই ফলা রেখেই!

সিপিএম সূত্রের খবর, দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ভোট-প্রস্তুতির প্রসঙ্গে এই কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কয়েক জন। তাঁদের প্রস্তাব, আসন বাছাই এবং রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণে দু’দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হোক। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলে যে মধ্যবিত্ত বাঙালি থাকেন, তাঁদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ফায়দা যেন বিজেপি তুলে নিয়ে না যায়, সে দিকে নজর দেওয়া হোক। রাজ্য কমিটিতেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাথায় রেখেই প্রচারের বিষয় ঠিক হচ্ছে, আসন বাছাইও হচ্ছে সব দিক খোলা রেখেই।

দলে আলোচনার পরে এই রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে বাড়তি নজর দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, অগ্রাধিকারের প্রথম তালিকার জন্য যে ৫০টি আসনের কথা এখনও পর্যন্ত ভাবা হয়েছে, তার মধ্যে শহরতলির যাদবপুর, দমদম উত্তর, কামারহাটি বা পানিহাটির মতো কেন্দ্রও রয়েছে। যেখানে জনবিন্যাস মিশ্র এবং মধ্যবিত্ত বাঙালিও বড় সংখ্যায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিকল্প হিসেবে বিজেপি যে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে, প্রথমে মানুষ অনেকটা বিশ্বাস করলেও এখন মোহভঙ্গ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘিরেও যা চলছে, তাতে তৃণমূলের সঙ্গে সঙ্গে বিজেপিকে কোণঠাসা করার সুযোগ আছে।’’

একই যুক্তি কংগ্রেস নেতৃত্বেরও। প্রতি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জেলা থেকে চেয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। নাম জমা পড়তেও শুরু করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও এখন সরকার-বিরোধিতার পাশাপাশিই যে বিরোধী পরিসর বিজেপি দখল নিয়েছে, তা উদ্ধারের চেষ্টায় নেমেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM West Bengal Assembly Election 2026

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy