সাধারণত রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বা বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় দাবিতে রেল অবরোধ হয়ে থাকে। শুক্রবার হালিশহর ও কাঁচরাপাড়ায় রেললাইন অবরোধ করা হল লোকাল ট্রেনে মহিলাদের জন্য আসন বাড়ানোর প্রতিবাদে। কিছু লোকের এই কর্মসূচির জেরে সারা দিনটাই কার্যত নষ্ট হল হাজার হাজার নিত্যযাত্রীর। আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিক মনে হলেও সেই কর্মসূচি নিয়ে জল ঘোলা করতে আসরে নেমে পড়ে বিজেপি।
হালিশহর ও কাঁচরাপাড়ায় সকাল থেকে অবরোধ চলায় এ দিন মেন লাইনে দুপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধই ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে নানা ভাবে বুঝিয়ে-সুজিয়েও অবরোধ তুলতে না-পেরে রেল পুলিশ দু’দফায় লাঠি চালায়। কেবিন ও স্টেশন থেকে বার করে দেয় বিক্ষোভকারীদের। লাঠির ঘায়ে পাঁচ জন জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ এই ঘটনায় ১০ অবরোধকারীকে গ্রেফতার করেছে।
অবরোধ চলাকালীন রেল-কর্তৃপক্ষ নৈহাটি পর্যন্ত কিছু ট্রেন চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নৈহাটির পরে ওই সময়ে আর কোনও ট্রেন চালানো যায়নি। পূর্ব রেল জানায়, বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেনের গড়ে দু’তিন ঘণ্টা দেরি হয়েছে। বাতিল করতে হয়েছে সাত জোড়া লোকাল ট্রেন।
হঠাৎ অবরোধ কেন?
যাত্রীদের চাহিদা মেনে সম্প্রতি কয়েকটি লোকাল ট্রেনের ভেন্ডার কামরার অর্ধেক মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অফিসের ব্যস্ত সময়ে ওই ট্রেনগুলি চালানো হচ্ছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ ও মেন এবং বনগাঁ শাখাতেও একই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেলকর্তারা জানান, এই পরিবর্তন করা হয়েছে যাত্রী সমিতির সম্মতিতেই। কিন্তু এ দিন অবরোধ হয় ওই আসন সংরক্ষণের প্রতিবাদেই। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন-সংখ্যা বাড়ানো হলে তাঁদের আসন কমে যাবে।
রেলকর্তাদের প্রশ্ন, এমনিতে তো ভেন্ডার কামরায় সাধারণ যাত্রীদের ওঠার কথা নয়। সেই কামরার একাংশে মহিলাদের কিছুটা জায়গা দিলে অন্যদের অসুবিধা কোথায়?
নিত্যযাত্রীদের বেশির ভাগই এই রেলের সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ওই আসন সংরক্ষণের প্রতিবাদে রেল অবরোধের জেরে গোটা দিনটাই বরবাদ হয়ে যাওয়ায় নিত্যযাত্রীরা তিতিবিরক্ত। তাঁদের একটি বড় অংশ এই অহেতুক অবরোধের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন। যাত্রীদের অনেকে বলছেন, মুকুল রায় সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দল বদলের পরে এ দিন ছিল কলকাতায় তাঁর প্রথম সভা। মুকুলবাবু যে-হেতু কাঁচরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা, তাই সেখান থেকে অনেক মানুষের তাঁর সভায় যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ওই সভায় তাঁদের যোগদান ঠেকাতেই কিছু মানুষ এই অবরোধ করেছিলেন বলে অনেক যাত্রীর অভিযোগ।
বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বও এই অবরোধের দায় শাসক দলের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ভেন্ডার কামরার একাংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত তো অনেক দিন আগেই হয়েছে। এত দিন পরে আজ হঠাৎ অবরোধ কেন?
জবাবটাও দিচ্ছেন বিজেপে নেতারাই: ‘আসলে শাসক দল আমাদের সভায় লোক যাওয়া আটকাতে চেয়েছিল।’
যদিও শাসক দলের নেতারা জানান, ওই অবরোধকারীদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্কই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy