E-Paper

বিজেপির তাস জাতীয়তা, মিছিলের ডাক তৃণমূলের

নবান্নে বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা-প্রস্তাব আনা হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাতৃভূমি রক্ষায় সেনাবাহিনী লড়াই করেছে বীরত্বের সঙ্গে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ০৮:২৮
সেনা ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ বিজেপি বিধায়কদের। উপস্থিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধাননগরে বিজেপি কার্যালয়ে।

সেনা ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ বিজেপি বিধায়কদের। উপস্থিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধাননগরে বিজেপি কার্যালয়ে। —নিজস্ব চিত্র।

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ-বিরতি আগাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরে কাশ্মীর সমস্যা নিয়েও মধ্যস্থতার কথা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকার আপস করছে, এই অভিযোগে বিজেপিকে নিশানা করছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। পাল্টা জাতীয়তাবাদের মন্ত্রকেই হাতিয়ার করছে বিজেপি। এই টানাপড়েনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তাঁদের দল গোটা বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক’ ভাবে দেখছেই না। সেনা ও আধা-সেনার কৃতিত্বকে সমর্থন জানিয়ে আগামী শনি ও রবিবার রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের তরফে মিছিল ও সভার ডাক দেওয়া হল। তবে জানিয়ে দেওয়া হল, সেখানে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে না।

নবান্নে বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা-প্রস্তাব আনা হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাতৃভূমি রক্ষায় সেনাবাহিনী লড়াই করেছে বীরত্বের সঙ্গে। আগামী শনি ও রবিবার বিকেলে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রত্যেক ব্লকে মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস। তাতে সেনাবাহিনীর বীরত্বকে কুর্ণিশ করা-সহ দেশের জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। মমতা বলেছেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক ভাবে বিষয়টিকে দেখি না। তাই আমি বা আমার দল এ নিয়ে একটা কথাও বলিনি।’’ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জেলা কমিটিগুলিকে জানিয়েছেন, কোথাও কোনও রাজনৈতিক বক্তৃতা করা যাবে না। কেবল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সেনা জওয়ানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই কর্মসূচি পালন করতে হবে।

ইন্দিরা মূর্তির পাদদেশে কংগ্রেসের অবস্থান।

ইন্দিরা মূর্তির পাদদেশে কংগ্রেসের অবস্থান। —নিজস্ব চিত্র।

জাতীয়তাবাদের ভাবাবেগ উস্কে তৃণমূল-সহ অন্যান্য দলকে টেক্কা দিতে চাইছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় কর্মসূচি মেনে কাল, শুক্রবার কলকাতায় ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ করবে রাজ্য বিজেপি। দলীয় পতাকা ছেড়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিল করার কথা তাদের। বিজেপি সূত্রের খবর, মিছিল শেষে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব পহেলগমে নিহত বাঙালি পর্যটকদের বাড়িতে দেখা করতে যেতে পারেন। তৃণমূল যে শনি ও রবিবার ব্লকে ব্লকে মিছিলের ডাক দিয়েছে, সেই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, “আমরা তো জাতীয় পতাকা নিয়ে বন্দে মাতরম ধ্বনি তুলে হাঁটব। ওই দলে তো এমন অনেকে আছেন, যাঁরা বন্দে মাতরম বলতে চান না! কেউ যদি সংশোধিত হতে চান, তা হলে স্বাগত।” রাজ্য বিজেপির বিধাননগর কার্যালয়ে বিজেপির ৬০ জন বিধায়ক এ দিন সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাব নিয়েছেন। প্রস্তাব পেশ করেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং সমর্থন করেন চন্দনা বাউড়ি।

ট্রাম্প-কাণ্ডকে সামনে রেখে প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে এ দিনই অবস্থান কর্মসূচি ছিল কলকাতায় ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে। মোদী সরকারকে বার্তা দেওয়ার জন্যই ইন্দিরা মূর্তিকে বেছে নিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। অবস্থানে শামিল হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, প্রদীপ ভট্টাচার্য, অমিতাভ চক্রবর্তী এবং এআইসিসি-র সহ-পর্যবেক্ষক অম্বা প্রসাদ প্রমুখ। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকার হস্তক্ষেপ নস্যাৎ করেছিলেন। এখন ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করেছেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী তা নিয়ে নীরব থেকেছেন! পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হানায় পর্যটকদের হত্যার বিচার পাওয়া গেল কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কংগ্রেস নেতারা।

এরই পাশাপাশি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আমরা আমেরিকাকে পাকিস্তান, কাশ্মীর এই সব বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ করে দিলাম, এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং বিপজ্জনক ইঙ্গিত বলে মনে হয়। কিন্তু তৃণমূল এই সব নিয়ে নীরব থাকতে চাইছে। কারণ, তারা মোদী তথা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না।’’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সরকারের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে দেশের স্বার্থকে আঘাত করা নয়।

এর মধ্যে বিএসএফের জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার ‘কৃতিত্ব’ নিয়ে অবশ্য পুরোদস্তুর প্রতিযোগিতায় নেমেছে তৃণমূল ও বিজেপি। পূর্ণমের ফিরে আসার ঘটনায় শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রীর ইতিবাচক ভূমিকার কথা সামনে নিয়ে এসেছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে তা নিয়ে একাধিক ‘পোস্ট’ করা হয় শাসক দলের তরফে। পূর্ণমের ফিরে আসার খবর জেনে এ দিন সকালেই সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীও জানান, ‘আমি খুশি। এই গোটা সময়টা আমি পরিবারটির সংস্পর্শে ছিলাম’। পূর্ণম এবং বাংলাদেশে আটক কোচবিহারের উকিল বর্মণের ছাড়া পাওয়া নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে বিজেপিও। তারা ধন্যবাদ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। পূর্ণমের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সন্ধ্যায় পূর্ণমের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ের দাবি, সাংবাদিক সম্মেলন করা এবং পরিবারের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টি ছাড়া পূর্ণম-কাণ্ডে তৃণমূল বা রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তৃণমূলের তরফে আবার পাল্টা দাবি, ‘পূর্ণমের স্ত্রী স্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রী শুরু থেকে তাঁদের পরিবারের পাশে ছিলেন এবং তাঁর ফিরে আসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তবু বিজেপি তা স্বীকার করতে নারাজ। এ বার অন্তত নোংরা রাজনীতি ছাড়ুন’!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress TMC protests

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy