Advertisement
E-Paper

নন্দীগ্রামের নার্সের মৃত্যু সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে, ময়নাতদন্ত হল না তিন দিনেও! কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা রয়েছে দেহ

বছর চব্বিশের দীপালির বাড়ি নন্দীগ্রামের রায়নগরে। হুগলির সিঙ্গুরে একটি নার্সিংহোমে মাত্র দিন ছয়েক আগে কাজে যোগ দেন তিনি। তিন দিনের মাথায় উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ২২:২৫
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে নার্সের দেহের ’অধিকার' নিয়ে সিপিএম ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে নার্সের দেহের ’অধিকার' নিয়ে সিপিএম ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল। —ফাইল চিত্র।

পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের নার্সের অস্বাভাবিক মৃত্যু হুগলির সিঙ্গুরের নার্সিংহোমে, তাঁর কর্মস্থলে। এ নিয়ে দু’দিন ধরে শোরগোল চলছে। ইতিমধ্যে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। এক জন ওই নার্সিংহোমের মালিক এবং দ্বিতীয় জন মৃতার প্রেমিক। কিন্তু ২৪ বছরের দীপালি জানার মৃত্যুর ঘটনার রেশ এসে পড়ল কলকাতাতেও। শুক্রবার স্বাধীনতা দিবসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সামনে কার্যত লড়াই করল বিজেপি এবং সিপিএম। দেহের ‘অধিকার’ কারা নেবে সে নিয়েই এই হট্টগোল। শেষমেশ শুক্রবারও ময়নাতদন্ত হয়নি নার্সের দেহের। বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মৃতার পরিবারকে তারা নিরাপত্তা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার দাবিতে প্রয়োজনে হাই কোর্টেও যেতে পারে পদ্মশিবির। অন্য দিকে, শাসকদল তৃণমূলের কটাক্ষ, ভোটের আগে দেহ দখলের রাজনীতি শুরু করেছেন বিরোধীরা।

মৃতার বাবা সুকুমার জানা জানান, শ্রীরামপুরে ময়নাতদন্ত করলেই ভাল হত। কিন্তু কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছিলেন তিনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যও বলছেন, রাজ্য সরকারের উপর তাদের আস্থা নেই। তাই কেন্দ্রীয় হাসপাতালেই নার্সের দেহের ময়নাতদন্ত হোক। এ নিয়ে শুক্রবার প্রায় ৬ ঘণ্টা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। যদিও মৃতার পরিবারের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে এমস কিংবা কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত চেয়ে পুলিশকে চিঠি দেয় পরিবার।

মঙ্গলবার রাতে বিজেপির উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, ‘‘মৃতার বাবা-মাকে আমরা নিরাপদে রেখেছি। বাবা-মা চান নিরপেক্ষ কোনও জায়গায় ময়নাতদন্ত হোক। সেটা কমান্ড হাসপাতাল হতে পারে। সেটা এমস হতে পারে।’’ তমোঘ্নের দাবি, রাজ্য পুলিশ যাতে এই প্রক্রিয়ায় মধ্যে না-থাকে, সেটাই চাইছে মৃতার পরিবার। তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ দেহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই রয়েছে। আগামিকাল পদক্ষেপ করা হবে যাতে অন্যত্র ময়নাতদন্ত করা যায়।’’ বিজেপির একটি সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, হাই কোর্টে তারা আর্জি জানাবে। যাতে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়।

কে এই নার্স?

বছর চব্বিশের দীপালির বাড়ি নন্দীগ্রামের রায়নগরে। হুগলির সিঙ্গুরে একটি নার্সিংহোমে মাত্র দিন ছয়েক আগে কাজে যোগ দেন তিনি। তিন দিনের মাথায় উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। এই ঘটনায় সরাসরি খুনের অভিযোগ তুলেছে নার্সের পরিবার। পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দীপালির। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। পুলিশের অনুমান, নার্সের মৃত্যুর নেপথ্যে ওই যুবকের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে। সেই কারণে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও, তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে বাড়ি যাওয়ার সময় দীপালির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন ওই নার্সিংহোমের মালিক। ফলে সেই বিষয়টি রয়েছে মৃত্যুরহস্যের তদন্তের আতশকাচের নীচে।

সিপিএম-বিজেপির তরজা

শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালের পর এ বার পুলিশ মর্গ, ময়নাতদন্তের জায়গা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে পরিবার। জোর করে না-জানিয়েই কলকাতা পুলিশের মর্গে দেহ আনার অভিযোগ করেছে তারা। তার পর দেহের ‘দখল’ নিয়ে সিপিএম-বিজেপি লড়াই তুঙ্গে ওঠে। কলকাতা পুলিশ মর্গের সামনে সিপিএম-বিজেপি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। এসএফআই ও সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়, বিজেপি তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখানে এসেছে পরিবারকে ‘কিনতে’। সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। গাড়ি ঘিরে রেখে দিয়েছে। কিছু একটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূল যা করে, একই জিনিস করছে। এখানে তৃণমূল আসার হিম্মত দেখাতে পারছে না। কেস খেয়ে যাবে। ওই জন্য বিজেপি এসে পরিবারকে কেনার চেষ্টা করছে।’’

অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, পরিবার রাজ্য সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে চাইছে না। লিখে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতা তমোঘ্ন বলেন, ‘‘শুরু থেকে লড়াইটা আমরাই দিচ্ছি। এই রাজনীতি ওরা বন্ধ করুক। পরিবার লিখিত ভাবে দিয়েছে, তারা কমান্ড হাসপাতাল অথবা এমসে পোস্ট মর্টেম চান। আমাদের মূল লক্ষ্য এটাই, সেটাই করানো দরকার। নোংরা রাজনীতি করছে। এটা বন্ধ করুক ওরা (বামেরা)।’’ তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘আজ বাংলার মানুষ দেখল, দু’পাল শকুন কী ভাবে মৃতদেহ কাড়াকাড়ির চেষ্টা করছে।’’

কে কী বলছেন

গত বুধবার রাতে নার্সিংহোমের চারতলার ঘর থেকে নার্সের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর এক সহকর্মীর কথায়, ‘‘রাতে দরজা বন্ধ ছিল... জানালা দিয়ে দেখি ও ঝুলছে!’’ যদিও মৃতার পরিবারের সরাসরি অভিযোগ, তাদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে।

ঘটনাক্রমে ময়নাতদন্ত নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। হুগলি জেলা পুলিশের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য তারা শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। কিন্তু, ওই হাসপাতালের সুপার দেহ সেখানে ময়নাতদন্ত না-করিয়ে তা রেফার করে দেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ মর্গে। পুলিশের দাবি, মৃতের পরিবারের সদস্যদেরও শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু, ওয়ালশ হাসপাতাল দেহ রেফার করে দেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ মর্গে। এখন মৃতের পরিবারের সদস্যেরা এখানে পোস্ট-মর্টেম করাতে চাইছেন না। তাঁরা চাইছেন, এমস হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে।

অন্য দিকে, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, এমস হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করাতে হলে আদালত থেকে সম্মতি নিয়ে আসতে হবে। কলকাতা মেডিক্যালের কর্তৃপক্ষ এমস হাসপাতালে রেফার করতে পারবেন না।

১৫ অগস্ট হাই কোর্ট ছুটি। তাই আদালতের সম্মতি আনা সম্ভব হয়নি। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে আগামী দিনও তা সম্ভব নয়। ফলে ময়নাতদন্ত কোথায় কবে হবে, সে নিয়ে ধন্দ অব্যাহত।

Singur Nandigram Political Clash BJP TMC CPM Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy