পশ্চিমবঙ্গের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার অপুষ্টির শিকার। এখনও ৬১ শতাংশের বেশি পরিবার রান্নার গ্যাসের বদলে কাঠ বা কয়লা ব্যবহার করে। ১০০টির মধ্যে ৪৭টি পরিবারের পাকা বাড়ি নেই। ৩২টি পরিবারের বাড়িতে নিজস্ব শৌচাগার নেই।
এই সমস্ত মাপকাঠিতে পিছিয়ে থাকার জন্যই রাজ্যের ২১.৪ শতাংশ মানুষকে নীতি আয়োগ দরিদ্র বলে বলে চিহ্নিত করেছে। পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বীরভূমে দরিদ্র মানুষের হার সব থেকে বেশি। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় দরিদ্র সব থেকে কম।
অপুষ্টি, শিশু-কিশোর অবস্থায় মৃত্যু, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, স্কুলে হাজিরা, জ্বালানি, পানীয় জল, নিকাশি, বাড়ি, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট, অস্থাবর সম্পত্তি— এই এক ডজন মাপকাঠির বিচার করে নীতি আয়োগ সম্প্রতি বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক তৈরি করেছে। এই সমস্ত মাপকাঠির দিক থেকে কত মানুষ বঞ্চিত, তা বিচার করেই দরিদ্রের হার ঠিক হয়েছে। রাজ্যগুলির মধ্যে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছেন। দরিদ্রতম রাজ্যের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে দ্বাদশ স্থানে। কেরল, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব, অন্ধ্র, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্রের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে দরিদ্র মানুষের হার অনেকটাই বেশি।
কেন এত পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ?
নীতি আয়োগের কর্তারা বলছেন— পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিশু-কিশোর মৃত্যু, স্কুলে হাজিরা, বিদ্যুৎ সংযোগ, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট, মায়েদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ অনেকখানিই এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু অপুষ্টি, রান্নার গ্যাস ব্যবহার না করা, পাকা বাড়ি ও শৌচাগারের অভাবের মতো সমস্যা পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে রেখেছে। রাজ্য সরকার সূত্রের বক্তব্য, নীতি আয়োগের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরেই এ বিষয়ে সরকারি ভাবে বক্তব্য জানানো হবে।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ভৌগোলিক অসাম্যও দারিদ্র সূচকে রাজ্যের পিছিয়ে থাকার বড় কারণ। নীতি আয়োগের সূচক অনুযায়ী, কলকাতার জনসংখ্যার মাত্র ২.৮ শতাংশ দরিদ্র। রাঢ় বঙ্গের পুরুলিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষই দরিদ্র। উত্তর ২৪ পরগনায় দরিদ্রের হার ১০ শতাংশের কম। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দরিদ্রের হার তার প্রায় তিন গুণ। একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরের তুলনায় উত্তর দিনাজপুরে দরিদ্রের হার অনেক বেশি। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিঙের মাত্র ১১.৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। কিন্তু পাশের জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে দরিদ্রের হার এর প্রায় দ্বিগুণ। নীতি আয়োগের কর্তারা বলছেন, এই ভৌগোলিক অসাম্য দূর হলেই দারিদ্র সূচকে পশ্চিমবঙ্গ অনেকখানি এগিয়ে যাবে। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, ভৌগোলিক অসাম্য দূর করতেই পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির উন্নয়নে আলাদা ভাবে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy