Advertisement
E-Paper

যাত্রীদের সাহায্যে বাসই ‘লেবার রুম’, বড়দিনের আগে নজির হয়ে রইল এই ঘটনা...

শুধু দাঁড়িয়েইছিল না, রুদ্ধশ্বাস প্রার্থনায় মিলে গিয়েছিল প্রতিটি মুখ। শিশুর কান্নার শব্দে সমবেত স্বস্তির শ্বাস পড়ল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
কোনা হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে নবজাতক।

কোনা হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে নবজাতক।

ব্যস্ত শহরের রাস্তার এক ধারে দাঁড় করানো বাসটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল ভিড়টা। শুধু দাঁড়িয়েইছিল না, রুদ্ধশ্বাস প্রার্থনায় মিলে গিয়েছিল প্রতিটি মুখ। শিশুর কান্নার শব্দে সমবেত স্বস্তির শ্বাস পড়ল।

সোমবার দুপুরে ৫৭ এ রুটের বাসটিই কিছু ক্ষণের জন্য হয়ে উঠেছিল ‘লেবার রুম’। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে প্রসববেদনায় ছটফট করতে থাকা সহযাত্রিণীকে নইলে বাঁচানো যাবে না, বুঝেছিলেন বাসের চালক কমলকান্ত মান্না। তিনিই যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করে বাসটিকে ফাঁকা করেন। দাঁড় করিয়ে দেন রাস্তার এক পাশে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন অন্য সহযাত্রীরাও। নিজেরাই গরম জল আর নতুন তোয়ালে জোগাড় করে আনেন তাঁরা। অভিজ্ঞ মহিলা যাত্রীরা মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে যান প্রসব করানোর জন্য। বড়দিনের আগে এই ভাবেই ‘গুড সামারিটান’-এর এক বিরল নজির গড়ে ফেলে হাওড়া।

শুধু এ-ই নয়, প্রসবের পরে মা ও শিশুকে নিয়ে ওই অবস্থাতেই কমলকান্ত বাস ঘুরিয়ে পৌঁছে গেলেন কাছের হাসপাতালে। সেখানেই ভর্তি করা হল মা ও সদ্যোজাত সন্তানকে। কমলকান্ত পরে বললেন, ‘‘এক জন মায়ের জন্য এটুকু তো করতেই হবে!’’

বাসচালক কমলকান্ত মান্না।

সোমবার দুপুরে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বাসে চেপে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন হুগলির গোবরা শিবতলার বাসিন্দা নান্টু বর্মা। বছর পঁচিশের নান্টু উত্তর হাওড়ার শপিং মলের কর্মী। হুগলির চণ্ডীতলা থেকে ছাড়া বাসটি কিছু ক্ষণের মধ্যে ভিড়ে ঠাসা হয়ে যায়। যার মধ্যে অনেক অফিসযাত্রীও ছিলেন।

আরও পড়ুন: দুরন্ত হওয়ায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় শৈশব!

কিছু ক্ষণ পর থেকেই প্রসবযন্ত্রণা শুরু হয়ে যায় ওই গৃহবধূর। নান্টু পরে বলেন, ‘‘বাস জগদীশপুর পেরোনোর পরেই আমার স্ত্রী যন্ত্রণায় বেঁকে যাচ্ছিল। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। খুব অসহায় লাগছিল।’’

তখনই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন বাসচালক। নান্টু জানান, বেলগাছিয়া মোড়ের কাছে আসতে কমলকান্তেরই অনুরোধে, বাসযাত্রীরা সবাই নেমে গিয়ে ঘিরে রাখলেন বাস। তার পর যাত্রীদের মধ্যে থেকে এক অফিসযাত্রী যুবক প্রথমে এগিয়ে এলেন বাকি কাজ সারতে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই যাত্রীরা সকলে নেমে গরম জল ও নতুন তোয়ালে কিনে আনার ব্যবস্থা করেন। কেউ যাতে ওই বাসে উঠতে না, পারেন সে জন্য বাসটিকে ঘিরে রাখেন পুরুষরা। ততক্ষণে ভিড় জমতে শুরু করেছে বেলগাছিয়া মোড়ে।

আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাব প্রতাখ্যাত হওয়ায় নিজের পুরুষাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কাটল যুবক

কন্যার প্রথম কান্না শুনে মুখে হালকা হাসি ফুটলেও চিন্তায় তখনও ছটফট করছেন সদ্য বাবা হওয়া নান্টু। তিনি বলেন, ‘‘পৃথ্বীশ সাউ নামে যে যুবক প্রথম থেকেই সাহায্য করছিলেন, তিনি বলেন অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে। তখনই বাসচালক বাসটিকে ঘুরিয়ে কোনা হাসপাতালে নিয়ে যান।’’

মা-শিশুকে বাঁচাতে পেরে হাঁফ ছাড়া কমলকান্ত নিজেও পরে বলেন, ‘‘বাসের কিছু যাত্রী বলেছিলেন হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু ওই সময় ওই হাসপাতালে যেতে হলে যানজটে পড়তে হত। তাই কোনা হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’

দু’টি প্রাণ বাঁচাতে পেরে উচ্ছ্বসিত বাসযাত্রী অপর্ণা বারুইও। বললেন, ‘‘বাচ্চার গলায় নাড়ি জড়িয়ে গিয়েছিল। আমিই সেটি গলা থেকে খুলে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিই। পরে চিকিৎসকরা নাড়ি কাটেন।’’

—নিজস্ব চিত্র ।

Pregnant Bus Belgachia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy