রাজ্য রাজনীতিতে মেরুকরণের প্রবণতা বজায় রাখার চেষ্টা জারি আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ নানা ক্ষেত্রের বেহাল দশা এবং দুর্নীতির প্রশ্ন মাঝে মাঝেই চাপা পড়ে যাচ্ছে মেরুকরণের ধাক্কায়। এমতাবস্থায় কৃষক, শ্রমিক-সহ প্রান্তিক অংশের মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্নে জোর দেওয়ার ডাক দিয়ে ব্রিগেড সমাবেশে যাচ্ছে সিপিএম। এ বারেই ব্রিগেডের উদ্যোক্তা সিপিএমের শ্রেণিভিত্তিক সংগঠন কৃষক, খেতমজুর এবং শ্রমিক ফ্রন্ট। নিয়োগ-দুর্নীতিতে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘটনা এবং কেন্দ্রের সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্রিগেড সমাবেশের একগুচ্ছ দাবির সঙ্গে।
আগামী রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। ঠিক হয়েছে, সমাবেশের দিন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ৭টি মিছিল হবে ব্রিগেড ময়দানের উদ্দেশে। কৃষক সভার অমল হালদার, খেতমজুর ইউনিয়নের নিরাপদ সর্দার ও তুষার ঘোষ, সিটুর অনাদি সাহু ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং বস্তি উন্নয়ন সমিতির তরফে সুখরঞ্জন দে, দেবাশিস চক্রবর্তীরা শুক্রবার দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে এ বার এক লক্ষের বেশি মানুষ ব্রিগেডে আসবেন। তাঁদের অনেকে এ দিনই রওনা দিয়ে দিয়েছেন। কৃষক সভার দফতর হরেকৃষ্ণ কোঙার ভবন, সিটুর রাজ্য দফতর শ্রমিক ভবন, শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র দফতরের মতো কিছু জায়গায় বাইরে থেকে আসা মহিলা কর্মী-সমর্থকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভাবে এন্টালির রামলীলা ময়দানে হচ্ছে থাকার বন্দোবস্ত। সচরাচর ব্রিগেড সমাবেশ হয় জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে। এ বার এপ্রিলের গরমে হচ্ছে বলে সমাবেশের সময় একটু পিছিয়ে বিকেল তিনটেয় করা হয়েছে।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কৃষক ও শ্রমিক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এ বারের ব্রিগেডের ডাক দিয়েছে সিপিএম। অমল, অনাদিদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে মারাত্মক দুর্নীতির ফল গরিব মানুষের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। চলছে বস্তি উচ্ছেদ। কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কৃষিজীবীর পাট্টা। শ্রম কোড এনে শ্রমিককে পরিণত করা হচ্ছে দাসে। কর্মহীনতা আর মূল্যবৃদ্ধির সঙ্কট মারাত্মক। এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথাই আমরা বলতে চাই।’’ ব্রিগেডে এ বার বক্তা অমল, নিরাপদ, অনাদি, বন্যা টুডুরা। সেই সঙ্গেই আছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সিপিএমের ব্রিগেডে যাঁরা যাবেন, তাঁরা বিজেপিকে ভোট দেবেন! ওটা লোক-দেখানো। সিপিএমের মিছিলে যাচ্ছেন দেখলেই বুঝবেন বিজেপির ভোটার! ভোটের অঙ্ক সে কথাই বলছে। আবার মিলিয়ে নেবেন।’’ আবার বিজেপির কটাক্ষ, তৃণমূলই লোক দিয়ে সিপিএমকে ব্রিগেড ভরাতে ‘সাহায্য’ করবে! যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মানুষকে যখন জাত-ধর্মে বিভাজনের চেষ্টা চলছে, দুর্নীতির রাজত্ব চলছে, তখন মানুষের কথায় রাজনীতি ফিরুক— ব্রিগেড এই বার্তা দেবে। শ্রেণিভিত্তিক সংগঠন এই ব্রিগেডের ডাক দিয়েছে। তৃণমূল চায়, যাঁরা তাদের সমর্থন করেন না, তাঁরা যেন বিজেপির দিকে থাকেন। আর বিজেপি চায় উল্টোটা। বামপন্থীদের শূন্য বলে কটাক্ষ করেও আসলে ভয় আছে বলে দু’দলের এত কথা!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)