Advertisement
E-Paper

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ডিএ দেয়নি রাজ্য সরকার, আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি শুরু কর্মচারী সংগঠনের

সরকারি কর্মচারী সংগঠন চাইছে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর ১৪ জুলাই এই মামলার শুনানি হোক। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করছে আদালত এবং বিচারপতিদের সূচির উপর। আগামী অগস্ট মাসের ৪ তারিখে ডিএ সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১৪:৩৪
Preparations to file contempt case in Supreme Court against state government over DA

—প্রতীকী ছবি।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে ২৫ শতাংশ ডিএ দেয়নি রাজ্য সরকার। এই অভিযোগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করার প্রস্তুতি শুরু করে দিল সরকারি কর্মচারী সংগঠন ফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। গত ১৬ মে অন্তর্বর্তী নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ছ’সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫% মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। সময়সীমা পেরোনোর পর রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে জানায়, তাদের এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তাই বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য আরও সময় প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানায় নবান্ন। রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে, তারা বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরাসরি আদালতের তহবিলে জমা দিতে প্রস্তুত।

১৬ মে আদালতের নির্দেশের পর ডিএ প্রসঙ্গে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি রাজ্য সরকার। তাই সরকারি কর্মচারীমহলে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি করে শুক্রবার জানা যায়, শীর্ষ আদালতে ডিএ সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। প্রসঙ্গত, ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট ডিএ সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দিয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রোপার অধীনে থাকা রাজ্য সরকারি কর্মচারী এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের যে পরিমাণ বকেয়া রয়েছে, তার ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে। সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে ২৭ জুন, শুক্রবার।

সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেই শুক্রবার গভীর রাতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে একটি ইমেল পাঠায় ফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। নবান্ন সূত্রে খবর, ওই মেলে লেখা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি রাজ্য সরকার ডিএ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে তারা রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিব প্রভাত মিশ্রর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করবে। ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে মূল মামলাকারী ফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ মানেনি। তাই নিয়মানুযায়ী আমরা ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আরও সাত দিন সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু ইমেলটি পাঠানোর পর রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সদুত্তর না পেয়েই আমরা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করব। আমরা সেই প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছি।’’

সরকারি কর্মচারী সংগঠন চাইছে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর ১৪ জুলাই এই মামলার শুনানি হোক। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করছে আদালত এবং বিচারপতিদের সূচির উপর। আগামী অগস্ট মাসের ৪ তারিখে ডিএ সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই দিনই রাজ্য সরকারের আবেদনের পাশাপাশি আদালত অবমাননার মামলাটির শুনানি হতে পারে। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম সুষ্ঠু ভাবে আদালতের নির্দেশ পালন করুক রাজ্য সরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের কাছে বিকল্প পথ রাখেননি। তাই বাধ্য হয়েই সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি ফের আদালতে গিয়ে নির্দেশ অবমাননার মামলা করবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট জমানায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সময়কালে এক মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল। সেবার মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে গিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে হাজিরা দিতে বলা হতেই পারে।’’

অন্য দিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অবিলম্বে কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ (মহার্ঘভাতা) মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে দাবি জানিয়ে ধর্মঘট এবং ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ওই সংগঠনের তরফে সোমবার বিবৃতি দিয়ে সে কথা জানানো হয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী-সহ সিপিএম সমর্থিত ওই সংগঠনের সদস্যেরা আগামী ৯ জুলাই একটি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু তার আগে আগামী ৪ জুলাই তাঁরা একটি ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে এর ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ২৭ জুনের মধ্যে মেটাতে হত। কিন্তু এখন বিষয়টি আবার পৌঁছে গিয়েছে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের চৌহদ্দিতে।

DA Dearness Allowances West Bengal government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy