E-Paper

লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে চড়ছে ফুল ও আনাজের দাম

একশো ছুঁই ছুঁই বেশ কিছু আনাজ। আর যারা তা পারেনি, তারা অনায়াসে অর্ধশতক হাঁকিয়েছে। শুধু আনাজই নয়, স্বস্তি মিলছে না ফুলের বাজারেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:০৭
লক্ষ্মীপুজোর আগে বাজারে চলছে কেনাকাটা। শনিবার।

লক্ষ্মীপুজোর আগে বাজারে চলছে কেনাকাটা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো মনে এলেই অনেকে ভাবেন, খিচুড়ির সঙ্গে পাঁচ রকমের আনাজ দিয়ে জমিয়ে লাবড়া বানানোর কথা। কিন্তু দুর্গাপুজোয় যে আনাজের দাম ছিল নাগালে, লক্ষ্মীপুজোর আগে তাই মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। ফলে সেই পরিকল্পনা ভেবে দেখতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত বাঙালিকে।

একশো ছুঁই ছুঁই বেশ কিছু আনাজ। আর যারা তা পারেনি, তারা অনায়াসে অর্ধশতক হাঁকিয়েছে। শুধু আনাজই নয়, স্বস্তি মিলছে না ফুলের বাজারেও। দুর্গাপুজোর সময়ে যে পদ্মের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকায় ঘোরাফেরা করছিল, সেই পদ্ম লক্ষ্মীপুজোর দিন তিনেক আগেই ১৮ থেকে ২০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে।

মানিকতলা বাজারে শনিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুজোর ভোগের জন্য আনাজ কিনতে এসে সোহিনী রায় নামে এক ক্রেতা বললেন, ‘‘যত রকম আনাজ দিয়ে লাবড়া বানাব ভেবেছিলাম, তার থেকে কম আনাজ দিতে হবে। একটা ছোট ফুলকপির দামই ৫০ টাকা। পটল ৮০ টাকা! দিন কয়েক আগেই তো ৬০ টাকা ছিল পটল! এত দাম দিয়ে শুধু আনাজ কিনলে তো পুজোর বাজেট অনেক বেড়ে যাবে। ফুলের দামও অনেক।’’

গড়িয়াহাট বাজার সমিতির সভাপতি তথা আনাজ বিক্রেতা দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো ঘরে ঘরে হয় না, কিন্তু লক্ষ্মীপুজো হয় প্রায় প্রতি ঘরে। ফলে এই সময়ে আনাজের চাহিদা দুর্গাপুজোর থেকে বেশিই বলা যায়। লাবড়া বা খিচুড়ি ভোগের জন্য যে সব আনাজ লাগে, সেগুলির চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে গেছে।’’ দিলীপ জানান, কেজিপ্রতি বেগুনের দাম ১০০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, টোম্যাটো ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা।

দাম যে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে বেড়েছে, তা স্বীকার করেছেন রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো হয়। তাই এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি আনাজের দাম বেড়েছে। এখন কোনও জেলাতেই বন্যা পরিস্থিতি নেই । তাই আনাজের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। লক্ষ্মীপুজো কেটে গেলে চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য কমল দে-ও দাম বৃদ্ধির কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘এখন কলকাতার বাজারে আনাজের ট্রাক ঢুকতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। ফলে জোগানের কমতি নেই। তাই আনাজের দাম বেড়ে থাকার কারণ আপাতত লক্ষ্মীপুজোই।’’

তবে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে দাম এত বাড়বে কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার করতে আসা ক্রেতারা। অনিমেষ বসু নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘‘প্রতিবারই লক্ষ্মীপুজোয় দাম বেড়ে থাকে। টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের কেন এখন বাজারে দেখতে পাই না? আপেল থেকে শুরু করে নাসপাতি ২০০ টাকার কম কিছু নেই। একটা ছোট নারকেলও ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দামের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই!’’

ফুল বাজারে গেলেও দেখা যাচ্ছে, ফুলের দাম চড়া। এ বার পদ্মের জোগান ভাল বলে দাম নাগালেই থাকবে, এমনটাই দাবি করেছিলেন ফুলচাষিরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ছোট আকারের পদ্মের দাম কিন্তু সেই ১৮-২০ টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। যা নাকি ১২-১৫ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছিলেন ফুলচাষিরা। সেই সঙ্গে ঝুরো ফুল যেমন গাঁদা, দোপাটি, রজনীগন্ধার দামও বেশ চড়া।

‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘পর পর নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার ফুলের চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পদ্ম ছাড়া সমস্ত রকম ফুল চলতি বছরের বর্ষা মরসুমে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত দোপাটি, গাঁদা, অপরাজিতা, রজনীগন্ধা-সহ বিভিন্ন ধরনের পাপড়িযুক্ত ঝুরো ফুলের মধ্যে বৃষ্টির জল ঢুকে পাপড়ি পচে ফুলের গুণমান নষ্ট হচ্ছে। ফুলে দাগ এসে যাওয়ায় ওই ফুল বিক্রি হচ্ছে না।’’ নারায়ণ জানান, লক্ষীপুজোয় ফুলের চাহিদা খুব বেশি থাকে। তা মেটাতে ফুল হিমঘরেও রাখা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় ফুলের জোগান কম থাকায় স্বভাবতই দাম বেড়েছে।

ফুলচাষিদের মতে খোলা বাজারে পদ্মের দাম ছিল গড়ে ১৫ থেকে ১৮ টাকা। ঝুরো লাল গাঁদা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, হলুদ গাঁদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিন ফুট দীর্ঘ লম্বা লাল গাঁদা ফুলের এক একটি মালাবিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ওই একই আকারের হলুদ এক একটি মালা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। অন্য দিকে, শনিবার দোপাটিঝুরো ফুল কেজি প্রতি দাম ছিল ৮০ টাকা এবং অপরাজিতার দাম ছিল ৩০০ টাকা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

laxmi puja market price

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy