Advertisement
E-Paper

Primary Teacher: নিয়োগ-জটের ফেরে ভিন্‌ রাজ্যে পড়াচ্ছেন ওঁরা

কিন্তু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাওয়া ওই বাঙালি যুবক-যুবতীদের ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হল কেন?

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৬
ক্লাস করাচ্ছেন রবসন জানি। নিজস্ব চিত্র

ক্লাস করাচ্ছেন রবসন জানি। নিজস্ব চিত্র

ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাঁদের কেউ কেউ উত্তরাখণ্ডে সরকারি বা বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। কেউ বা একই কাজ করছেন ঝাড়খণ্ডে, আবার কেউ ছত্তীসগঢ়ে। তবে নিজের রাজ্যে থাকার এবং নিজের গ্রামে বা আশপাশের জেলা শহরে শিক্ষকতা করে পরিবারের প্রতিপালনের স্বপ্নটুকু বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরা। বাংলায় শিক্ষকতার সুযোগ পেলে তাঁরা ফিরে আসতে চান নিজের রাজ্যেই।

কিন্তু উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাওয়া ওই বাঙালি যুবক-যুবতীদের ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হল কেন? এক কথায় উত্তর: এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ-জটই এর কারণ। ওই প্রার্থীরা জানান, তাঁরা লিখিত টেট দিয়েছেন ২০১৫ সালের অগস্টে। তার পরে দু’বার ইন্টারভিউ হয়েছে। প্যানেল বাতিল হয়েছে এক বার। উচ্চ প্রাথমিকে এসএসসি-র নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও বিশ বাঁও জলে। বাধ্য হয়েই শিক্ষকতা করতে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হয়েছে তাঁদের।

মুর্শিদাবাদের নওদার চাঁদপুর গ্রামের রবসন জানি এক বছর ধরে ছত্তীসগঢ়ের বস্তার জেলার জগদলপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষকতা করছেন। সোমবার অনলাইন ইংরেজি ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে রবসন ফোনে বলেন, “প্রথম বার ইন্টারভিউ দিলাম। মেধা-তালিকায় নাম উঠল। কিন্তু সেই প্যানেল পরে বাতিল হয়ে গেল। ফের নাম উঠল ইন্টারভিউয়ের তালিকায়। ফের ইন্টারভিউ দিলাম। কিন্তু এখন মামলার জটে আটকে গিয়েছে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ। একটা চাকরির জন্য দু’বার ইন্টারভিউ। তবু চাকরি হচ্ছে না। কত আর অপেক্ষা করব! রাজ্য ছাড়তেই হল। কম বেতনে শিক্ষকতা করছি ছত্তীসগঢ়ে।”

রবসন জানান, তিনি যে-শহরে থাকেন, তার খুবই কাছে মাওবাদী এলাকা সুকমা। ওই এলাকা দিয়ে তাঁকে যাতায়াত করতে হয়। রবসনের কথায়, “ভয় লাগলেও তো উপায় নেই। উচ্চ প্রাথমিকে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে দিনের পর দিন এসএসসি অফিসের সামনে অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধর্না দিয়েছি। আন্দোলন করেছি। কিন্তু কত দিন এই ভাবে চলবে?”

উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে একটি বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি পড়াচ্ছেন বীরভূমের রামপুরহাটের তরুণী সুফিয়া আলি। তিনি জানান, বঙ্গে প্রথম বারেই উচ্চ প্রাথমিকের প্যানেলে তাঁর নাম উঠেছিল। কিন্তু সেই প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। ফের ইন্টারভিউ দেন। কিন্তু চাকরি হয়নি এখনও। নিরুপায় হয়ে উত্তরাখণ্ডের বেসরকারি স্কুলে চাকরি নিয়েছেন। সুফিয়া বলেন, “আমাদের রাজ্যে একটি বেসরকারি স্কুল চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু যা বেতন, তাতে সংসার চালান অসম্ভব। উত্তরাখণ্ডে এখন যে-স্কুলে কাজ করছি সেখানে যা বেতন দেয়, তাতে কিছুটা হলেও টাকা বাঁচিয়ে বাড়িতে পাঠাতে পারি।” সুফিয়া জানাচ্ছেন, উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ-জট কেটে গিয়ে যদি চাকরি জোটে, ফিরতে চান বাংলাতেই।

উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকপদের মেধা-তালিকায় নাম ওঠা এবং দু’বার ইন্টারভিউ দেওয়া সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের আব্দুল জালান এখন ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূমের মেঘাতাবুরুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষকতা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ধানবাদের বিএড কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার তাপস মাইতি। আব্দুল ও তাপস জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় বার ইন্টারভিউ দেওয়ার পরে তাঁরা ভেবেছিলেন, এ বার নিশ্চয়ই দ্রুত নিয়োগ হবে। কিন্তু মামলার জটে ফের আটকে গিয়েছে নিয়োগ। তাপস ও আব্দুলের প্রশ্ন, কোনও দিন কি নিজের রাজ্যে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাব?

পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “এই সব মেধাবী চাকরিপ্রার্থী বাধ্য হয়ে ভিন্‌ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। অথচ এঁরা আমাদের রাজ্যে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে বাংলার খুদে পড়ুয়ারাই উপকৃত হত। ২০১৫ সালে যে-লিখিত টেট হয়েছিল, তার নিয়োগ এখনও শেষ করতে পারেনি এসএসসি। গত কয়েক বছরে শুধু এসএসসি-তে পরপর চেয়ারম্যান বদল হয়েছে। অথচ নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকেই আছে।”

এসএসসির নতুন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন, “স্বচ্ছতার সঙ্গে যাতে দ্রুত নিয়োগ হয়, সেই বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেব। চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না। আশা করি, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হবে।”

Primary Teacher Chattisgarh Jharkhand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy