প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতা করতে গেলে আগামী দু’বছরের মধ্যে সমস্ত শিক্ষকদের টেট পাশ করতেই হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই সাম্প্রতিক নির্দেশে লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক চাকরি বজায় রাখা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, যাঁরা টেট পাশ নন তাঁদের চাকরি রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাল্টানোর জন্য রাস্তায় নামছেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। পাশাপাশি, অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন পরিবর্তনের দাবিও জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্স জারিই এই অনিশ্চয়তা দূর করার একমাত্র রাস্তা।
প্রাথমিক শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ২০১১ সাল থেকে নিয়ম হল, প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলে প্রাথমিকের প্রবেশিকা পরীক্ষা টেটে পাশ করতেই হবে। টেট পরীক্ষায় বসার জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর এবং দু’বছরের ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন (ডিএলএড) তালিমও আবশ্যক। কিন্তু ২০১১ সালের আগে উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত যে নিয়োগ হয়েছিল সেখানে এই নিয়ম আবশ্যক ছিল না। তখন টেট দিতে হত না। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, টেট পাশ নন অথচ বছরের পর বছর পড়িয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কেন নতুন করে টেট দিতে হবে? টেট দিলে তাঁরা যে পাশ করবেন, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গীয় শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী সমিতি, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ-সহ রাজ্যের প্রায় সমস্ত শিক্ষক সংগঠন মনে করছে, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ জারি করেছে তার পরিবর্তন করতে কেন্দ্রকে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুইয়ের দাবি, “অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন পরিবর্তনের উদাহরণ আগে আছে। যে সব প্রাথমিক শিক্ষকদের দু’বছরের জায়গায় এক বছরের প্রশিক্ষণ ছিল তাঁদের বলা হয়েছিল, দু’বছরের প্রশিক্ষণ আবশ্যক। ২০০৯ সালে আমরা কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন পরিবর্তনের দাবি করি। এর পরে অর্ডিন্যান্স জারি করে বলা হয়, যাঁরা এক বছরের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের আরও এক বছরের ব্রিজ কোর্স করে নিতে হবে। আমরা চাই এ বারও তেমনই অর্ডিন্যান্স জারি করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বদল করা হোক।’’অর্ডিন্যান্স জারি করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছে বঙ্গীয় শিক্ষক শিক্ষিক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। সংগঠনের এক নেতার মতে, “লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের চাকরি সুনিশ্চিত করতে পারে কেন্দ্রই। রাজ্য রিভিউ পিটিশনে গেলে লাভ হবে বলে মনে হয় না। ফলে কেন্দ্রকে আইন পরিবর্তন করতে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে। এই দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমরা চিঠি দিয়েছি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)