Advertisement
E-Paper

একই লাইনে জোড়া লোকাল, গাফিলতি কার

বছর ছয়েক আগে সাঁইথিয়ায় বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ। তার পরে কেরলের কারুকুট্টি। কারুকুট্টির পরে কটক। এবং কটকের পরে শ্রীরামপুর। এক লাইনে মুখোমুখি বা পিছনে পিছনে ট্রেন ঢুকে পড়ার অদ্ভুত অসুখ আর সারছেই না রেলের।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

বছর ছয়েক আগে সাঁইথিয়ায় বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ। তার পরে কেরলের কারুকুট্টি। কারুকুট্টির পরে কটক। এবং কটকের পরে শ্রীরামপুর। এক লাইনে মুখোমুখি বা পিছনে পিছনে ট্রেন ঢুকে পড়ার অদ্ভুত অসুখ আর সারছেই না রেলের।

শ্রীরামপুর স্টেশনে শনিবার রাতে একই লাইনে দু’টি লোকাল ট্রেন ঢুকে পড়ার ঘটনার জন্য সিগন্যাল এবং পয়েন্টের ত্রুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে প্রাথমিক তদন্তে। ওই ঘটনায় রবিবার আপ বর্ধমান লোকালের চালক ও গার্ড এবং শ্রীরামপুরের স্টেশন ম্যানেজারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু সিগন্যাল বা পয়েন্টের ত্রুটি থাকলে চালক কী করবেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন রেল অফিসারদেরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সিগন্যাল বা পয়েন্ট সেটিংয়ে গাফিলতি না-থাকলে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার জন্য ঘোষিত ট্রেন কোনও ভাবেই চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে পারে না। সেই ত্রুটি বা গাফিলতি কার? সেটা মানুষের ত্রুটি, নাকি যান্ত্রিক বিভ্রাট? এক লাইনে জোড়া ট্রেন ঢুকল কী ভাবে, এই সব প্রশ্নের জবাবেই সেই রহস্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন অনেক প্রাক্তন রেলকর্তা।

শনিবার রাতে হুগলির শ্রীরামপুর স্টেশনে আপ বর্ধমান লোকাল তার জন্য নির্দিষ্ট তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের বদলে ঢুকে পড়ে চার নম্বরে। তখন চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল আপ তারকেশ্বর লোকাল। বিপদ বুঝে বর্ধমান লোকালের চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামান। ঠিক সময়ে ব্রেক না-কষলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে জানান রেলকর্তারাই।

ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতে আজ, সোমবার যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলবেন রেলকর্তারা। বছর ছয়েক আগে সাঁইথিয়ায় এক লাইনে বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়। গত অগস্টে কেরলের কারুকুট্টি স্টেশনে তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস ও ম্যাঙ্গালোর এক্সপ্রেস এক লাইনে চলে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। তাতে অবশ্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছিল। সেপ্টেম্বরে কটকের কাছে একটি সেতুতে চলন্ত মালগাড়ির পিছনে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধাক্কা মারায় প্রাণ হারান দু’জন। তার পরে শ্রীরামপুর। রেলে এক লাইনে ঢুকে পড়ার এই ধারাবাহিক অসুখ কেন সারছে না? যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে হইচই সত্ত্বেও এই বিশেষ দিকটিতে নজর নেই কেন?

সরাসরি জবাবের বদলে মানুষের ত্রুটি বা যান্ত্রিক গোলযোগের কথা বলেই দায় সারছেন রেলকর্তারা। রেল মহলের অনেকে বলছেন, যে-ট্রেন তিন নম্বর লাইনে আসছে, সাধারণ ভাবে তার তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মেই ঢোকার কথা। তবু যে বর্ধমান লোকাল চার নম্বর লাইনে ঢুকে পড়ল, তার জন্য নিশ্চয়ই চার নম্বর লাইনে যাওয়ার জন্য পয়েন্ট সেট করা ছিল। চার নম্বরে ঢোকার পয়েন্ট সেটিং না-থাকলে বর্ধমান লোকাল ওই পয়েন্টের কাছে পৌঁছে বেলাইন হয়ে যেত। সেটা যখন হয়নি, তখন ধরে নিতে হবে, পয়েন্ট ও সিগন্যালের গোলমালেই এটা ঘটেছে।

বর্ধমান লোকালের চালক শনিবারেই জানান, তিনি চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকারই সিগন্যাল পেয়েছিলেন। রেলকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, চার নম্বরে কোনও ট্রেন দেওয়ার জন্য আগেই সেখানে পয়েন্ট সেট করা ছিল। তার পরে হয় আর সেই সেটিং বদলানো হয়নি অথবা বদলানো হলেও যান্ত্রিক ত্রুটিতে সেই বদল কার্যকর হয়নি।

মানুষের ভুলত্রুটি, গাফিলতির সম্ভাবনা তো খতিয়ে দেখা হচ্ছেই। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে কোনও ত্রুটি বা কেবিনের প্যানেল যন্ত্রে কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না, তা-ও যাচাই করছেন তদন্তকারীরা।

Train Rail Train Line
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy