Advertisement
E-Paper

বিরিয়ানিতেও কমেনি ক্ষোভের ঝাঁঝ

তিনি বাসের ভাড়া মেটালেন।অন্তত ২০০ জন দলীয় নেতাকর্মীকে মাটন বিরিয়ানি খাওয়ালেন।তবু, আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভাঙড়ের দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের ঝাঁঝ কমাতে পারলেন না দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
ভাঙড়ের দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

ভাঙড়ের দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

তিনি বাসের ভাড়া মেটালেন।

অন্তত ২০০ জন দলীয় নেতাকর্মীকে মাটন বিরিয়ানি খাওয়ালেন।

তবু, আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভাঙড়ের দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের ঝাঁঝ কমাতে পারলেন না দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়! যিনি আরাবুলের ‘অন্যতম পৃষ্ঠপোষক’ বলে আগেই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।

বুধবার সকালে বেহালায় নিজের আবাসনের নীচের হলঘরে ভাঙড়ের আন্দোলন নিয়ে সেখানকার দলীয় নেতাকর্মীদের কথা শোনার জন্য বৈঠক ডেকেছিলেন শোভনবাবু। ১০টি বাসে করে তাঁরা আসেন। তাঁদের জন্য বিরিয়ানির ব্যবস্থা ছিল। খাওয়া-দাওয়ার পরেই টানা আড়াই ঘণ্টা আরাবুল ও তাঁর বাহিনীর নানা ‘কীর্তিকলাপ’ এবং তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন আগত সকলেই। বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী এক তৃণমূল নেতা হাতজোড় করে শোভনবাবুকে এ কথাও শোনান, ‘‘দাদা, বিরিয়ানি খাওয়ালেন। বাসভাড়া দিলেন। কিন্তু আরাবুলের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেন, তা হলে সব কিন্তু জলে যাবে।’’

মন জয়ের চেষ্টা করেও ‘আরাবুল-বিরোধী’ ওই তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাগে আনতে পারেননি শোভনবাবু। তাঁর মতো দলের শীর্ষ স্তরের নেতাকে (যিনি আবার কলকাতার মেয়র এবং মন্ত্রীও) সামনে পেয়ে তাই ওই তৃণমূল নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বাঁধ মানেনি। আন্দোলন-পর্বেই ভাঙড়ের এক বর্ষীয়ন তৃণমূল নেতা জানিয়েছিলেন, আরাবুলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। দল যদি ওঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিত, তা হলে ভাঙড়ের এই অবস্থা হয়তো হতো না! এ দিন বৈঠকের মধ্যে এক দলীয় কর্মী তো শোভনবাবুকে সরাসরি বলে দেন, ‘‘মাসদুয়েক আগেই মহকুমাশাসকের সামনে আরাবুল আমাদের মারতে এসেছিল। তখন বিষয়টি তো আপনাকে জানানো হয়েছিল। তার পরেও আরাবুলের দাপট কমেনি। সেই কারণেই নকশাল নেতারা আসার পরে আমরা আন্দোলনে যোগ দিই।’’

কী অভিযোগ ওই তৃণমূল নেতাকর্মীদের?

দিনের পর দিন ছলে-বলে আরাবুল ও তাঁর বাহিনীর কৃষিজমি দখল এবং চড়া দামে তা বিক্রি করা। এমনকী, পাওয়ার গ্রিডের জমির জন্য ক্ষতিপূরণের টাকাও যে আরাবুল আত্মসাৎ করেছেন, সে অভিযোগও এ দিন ফের ওঠে। একের পর এক অভিযোগে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত লেগেছে শোভনবাবুকে। ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে আরাবুল এবং পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের প্রধানের পদ থেকে তাঁর ছেলে হাকিলুবকে সরানোর দাবি ওঠে।

বৈঠক শেষে শোভনবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে চলি। কোনও নেতাই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেন না। আমিও না। কোনও পক্ষপাত না করে ব্যবস্থা নেব।’’ আরাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র আগামী তিন দিনের মধ্যে তাঁর কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেন শোভনবাবু।

কিন্তু আরাবুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শোভনবাবু কতটা উদ্যোগী হবেন, সে প্রশ্ন যেমন বিরোধীদের রয়েছে, তেমনই সন্দিহান ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, বিধানসভা ভোটে ভাঙড় থেকে রেজ্জাক মোল্লা জিতে যাওয়ায় পায়ের তলার মাটি আলগা হয়ে গিয়েছিল আরাবুলের। কিন্তু শোভনবাবুকে ধরে তিনি টিঁকে রয়েছেন। শোভনবাবুর অঙ্গুলি-হেলনেই আরাবুল ‘রেজ্জাক-বিরোধিতা’ চালিয়ে গিয়েছেন। আগে অনেক বার জমি দখল নিয়ে শোভনবাবুর কাছে আরাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হলে গত ১৭ জানুয়ারি ভাঙড় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠত না।

এ সব কথা অবশ্য শোভনবাবু মোটেই মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমি আরাবুলকে মদত দিইনি। রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের অভিযোগে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আইন আইনের পথেই চলেছে।’’

আরাবুল কী বলছেন? এ দিনও তিনি নির্বিকার। তাঁর একই উত্তর, ‘‘আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।’’

Arabul Islam Sovan Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy