বীর: বাড়ি ফিরলেন জওয়ান সুজিত বিশ্বাস। শনিবার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়ায়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
একেই হয়তো নিয়তি বলে!
ডিসেম্বর মাসে ২৫ দিনের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন সিআরপির ৯৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান সুদীপ বিশ্বাস। ১৫ জানুয়ারি তিনি কর্মস্থলে রওনা দেন। জম্মু পৌঁছনোর পর কিছু দিনের মধ্যেই কাশ্মীরে চলে যেতেন। কিন্তু তাঁর ব্যাটেলিয়নের এক জওয়ান অসুস্থ হওয়ায় তাঁর সঙ্গে সুদীপকে থেকে যেতে হয়। বৃহস্পতিবার ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের সঙ্গে সুদীপ কাশ্মীর যাচ্ছিলেন। সেই সময় ঘটে জঙ্গি বিস্ফোরণ। নিহত হন সুদীপ। তাঁর বাড়ির লোকের আফশোস যাচ্ছে না। নিজের ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে আগে চলে গেলে হয়তো অন্য রকম হত সব কিছু। কিন্তু নিয়তি এটাই!
শুক্রবারের পর থেকে থম মেরে রয়েছে পলাশিপাড়া হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়া গ্রাম। এই রকম একটা মৃত্যুর কারণে এই গ্রামের নাম গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে কিছুতেই যে চাননি গ্রামবাসীরা। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বিশ্বাস পরিবারের সদস্যেরা। অভাবের সংসারে একটু একটু করে হাল ফিরছিল সুদীপ চাকরি পাওয়ার পর। বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন অভিভাবকেরা। তার জন্য আলাদা পাকা ঘরও করা হয়েছিল। সব কিছু এখন তাঁদের তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
তখনও আসেনি সুজিতের দেহ। কান্না আত্মীয়দের। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
গোটা গ্রাম শুক্রবার থেকেই ভিড় করে আছে বাড়ির সামনে। রয়েছে সংবাদমাধ্যমের লোক জন। দেখা করতে এসেছিলেন এক সময়ের সহকর্মী সিআরপি জওয়ান কৃষ্ণনগরের সোমনাথ দে। পরিবার সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে সিআরপির চাকরিতে যোগ দেন সুদীপ। শিলিগুড়িতে প্রশিক্ষণ শেষে অরুণাচল প্রদেশে তাঁর পোস্টিং হয়। সেখান থেকে চলে যান কাশ্মীরে।
সুদীপের ভগ্নিপতি সমাপ্ত বিশ্বাস জানান, সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাসের সামান্য জমি রয়েছে। সেখানে চাষবাস করে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার চালাতেন। বছর পাঁচেক আগে বোন ঝুম্পার বিয়ে হয় তাঁর সঙ্গে। তার পরে সুদীপ সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সংসারের হাল ফিরেছিল। প্রতিবেশীরা জানালেন কথায়, সাদাসিধে, মিশুকে ছেলে ছিলেন সুদীপ। ক্রিকেট খেলার নেশা ছিল খুব। কাশ্মীর থেকে একটা ভাল ক্রিকেট ব্যাট আনবেন বলেছিলেন।
শনিবার রাত ৯টা নাগাদ তাঁর কফিনবন্দি দেহ বাড়ির সামনে তৈরি মঞ্চে এনে রাখার পরে চোখের জল বাঁধ মানেনি কারও। সেনাকর্তা, নেতাদের ভিড়, পুলিশের গানস্যালুটের মধ্যেই তাঁর স্কুল হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের শিক্ষক নীলোৎপল দত্ত চোখ মুছে বললেন, ‘‘খুব অনুগত, বাধ্য ছেলে ছিল। এই পরিণতি মানা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy