Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উঠোনে ছবি সুদীপের, পাশে তেরঙ্গা

শনিবার সকালে সুদীপের দেহ বাড়িতে এসে পৌঁছনোর কথা থাকলেও শনিবার রাতে তাঁর দেহ ফেরে। অধীর আগ্রহে মানুষজন অপেক্ষা করছিলেন ঘরের ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে। 

বাড়িতে নিহত জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের বাবা। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে নিহত জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের বাবা। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

শনিবার গভীর রাতেই সিআরপি জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের সৎকার হয়। রবিবারও থমথমে তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া গ্রাম। সুদীপের বাড়িতে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে এ দিনও মানুষের আনাগোনা ছিল।

শনিবার সকালে সুদীপের দেহ বাড়িতে এসে পৌঁছনোর কথা থাকলেও শনিবার রাতে তাঁর দেহ ফেরে। অধীর আগ্রহে মানুষজন অপেক্ষা করছিলেন ঘরের ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে।

কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পাড়ার ছোট মাঠে তৈরি একটি অস্থায়ী মঞ্চ। জওয়ানের দেহ প্রায় এক ঘণ্টা শায়িত রাখা ছিল সেখানে। জেলা পুলিশ ও সিআরপির তরফে গান স্যালুট দেওয়া হয় নিহত জওয়ানকে। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া জওয়ানের দেহতে মাল্যদান করে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান এলাকার নেতা-মন্ত্রী থেকে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা।

পরে সেখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরে কিছু ক্ষণের জন্য সুদীপের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। চোখের জলে তাঁরা জওয়ানকে বিদায় জানান। রাত ১১টা নাগাদ সুদীপের দেহ বাড়ি থেকে কনভয় করে শেষকৃত্যের জন্য রওনা দেয় পালশি রামনগর ঘাটের উদ্দেশে।

দেহ যখন পলাশির রামনগর শ্মশানে পৌঁছোয়, ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে ১১টা।

শ্মশানে যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। একই ভিড় দেখা যায় রামনগর শ্মশান ঘাটেও। প্রায় হাজার খানেক মানুষ জড়ো হয়েছিল সেখানে। এলাকার বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এসেছিলেন সুদীপকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শনিবার রাতে সুদীপের শেষ স্মৃতিকে ক্যামেরাবন্দিও করেছেন অনেকে।

নদিয়া জেলা পুলিশের তরফে রামনগর ঘাটে আগে থেকেই সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। সাধারণের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়। এ ছাড়াও নির্বিঘ্নে সৎকারের জন্য আগাম সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

নিহত জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দেওয়া হয়। সুদীপ অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর পনেরো বছরের জেঠতুতো ভাইপো সন্তু বিশ্বাস শ্মশানে মুখাগ্নি করে। ভোর ৩টে নাগাদ শেষকৃত্য শেষ হয়। ঘাটে উপস্থিত সেনাবাহিনীর কর্তা ও পরিবারের লোকেদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। গ্রাম থেকেও প্রায় জনা পঞ্চাশেক প্রতিবেশী শ্মশানযাত্রী হয়েছিলেন।

রবিবার সকালে সুদীপের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একটি বেদি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সুদীপের ছবি। ফুল-মালায় সাজানো সেই ছবির পাশেই টাঙানো জাতীয় পতাকা।

রবিবারও এলাকার বহু মানুষ এসে সেই বেদিতে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন। শ্মশানযাত্রী গ্রামের বৃদ্ধ বিশ্বেশ্বর মণ্ডল বলেন, ‘‘সুদীপ আমার নাতির বয়সি। শ্মশানে থেকে বাড়ি ফিরে আসার পরে মনটা খুব খারাপ লাগছে।’’ শনিবার রাতে সিআরপি বাহিনীর পক্ষ থেকে সুদীপের এক সহকর্মী ও মালদহের যুবক সূর্যচন্দ্র সিংহকে পাঠানো হয়েছিল। মরদেহের সঙ্গে আসা অন্য জওয়ানেরা ফিরে গেলেও তিনি হাঁসপুকুরিয়াতে থেকে গিয়েছেন। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘শনিবার রাতে মৃতদেহের সঙ্গে এসেছি। সুদীপের মৃত্যুকালীন সরকারি সাহায্য পাওয়ার জন্য যে সব কাগজপত্র তৈরি করার প্রয়োজন, সে সব শনিবার করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ সেই কাগজপত্র তৈরি করে আমি আবার ইউনিট-এ ফিরে গিয়ে আধিকারিকের কাছে কাগজপত্র জমা দেবো।’’

সুদীপের বাড়িতে এক মাত্র রোজগেরে ছিল সুদীপ। এর পর কী ভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার। তবে মা মমতা বিশ্বাস ও বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস রবিবারও সে নিয়ে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। সুদীপের বোন ঝুম্পা ও তাঁর স্বামী সমাপ্ত বিশ্বাসই সব দিক সামলাচ্ছেন।

ঝুম্পা বলেন, ‘‘বহু জায়গা থেকে আমাদের ফোন করা হয়েছিল। তবে এখনও কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্যের কথা আমাদের জানানো হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE