Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ কাদের জন্য, উত্তর মেলেনি দু’দশকেও

কেটে গেল পাক্কা দু’দশক। ভারতের অন্যতম সাড়া জাগানো আন্তর্জাতিক অপরাধ পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের রেশ কি আদৌ কেটেছে? ফিরে দেখলেন অশোক সেনগুপ্তকেটে গেল পাক্কা দু’দশক। ভারতের অন্যতম সাড়া জাগানো আন্তর্জাতিক অপরাধ পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের রেশ কি আদৌ কেটেছে?

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৩১
Share: Save:

এ বছরের দু’টি ঘটনা। গত মার্চ মাসে প্রকাশিত হল সাংবাদিক তথা বিজেপি সাংসদ চন্দন নন্দীর বই ‘দি নাইট ইট রেইন্ড গানস: আনরাভলিং দ্য পুরুলিয়া আর্মস ড্রপ কনস্পিরেসি’। আর, ডেনমার্কের পরিচালক আন্দ্রেয়াস কোয়েফোয়েদ একই বিষয় নিয়ে তৈরি করলেন ৯৪ মিনিটের তথ্যচিত্র। গত ১৩ এপ্রিল এবং ৩ মে কানাডার টরেন্টোয় ‘হট ডক্স ফেস্টিভ্যালে’ দেখানো হল সেটি। এর পর পশ্চিমী বিভিন্ন শহরে লোকে দেখেছে ছবিটি। আর তার আগের বছর রহস্যজনক ভাবে খুন হলেন অস্ত্রবর্ষণ মামলার সরকারি সাক্ষী মঙ্গলাপ্রসাদ। পেশায় ছিলেন ট্যাক্সিচালক। বেশ কিছু দিন নিখোঁজ থাকার পর তাঁর মরদেহ মেলে লক্ষ্মীসরাই জেলার কিউল রেল জংশনের কাছে।

গত ২০ বছরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অজস্র লেখালেখি হয়েছে সাড়া জাগানো ওই অস্ত্রবর্ষণ নিয়ে। আইনি সওয়াল, অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে দু’টি সম্ভাবনা: ১) আনন্দমার্গী গোষ্ঠীর কাছে ওই অস্ত্রসম্ভার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। ২) অস্ত্র পৌঁছনোর কথা ছিল মায়ানমারের কাচিন বিদ্রোহীদের কাছে। কিন্তু কারা, ঠিক কী উদ্দেশ্যে ওই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাঠিয়েছিল, তার প্রমাণ মেলেনি।

নিম্ন আদালতের রায়ে বিচারক বলেন, ‘as per the materials available I hold that it has been established from the materials on record that the places where the arms were targeted to be dropped were of Anandamargies and precisely three storied white building was the target point and at that target point the arms were tried to be dropped from a flying aircraft and the aircraft has been pin pointed as per the evidence and materials on record.’ কিন্তু উচ্চ আদালতের বিচারক এই রায় সমর্থন করেননি।

অস্ত্রবর্ষণের পর শুরু হয় তুমুল হইচই। রাজ্য ও দেশের সীমা ছাড়িয়ে এর জল গড়ায় ডেনমার্ক, রাশিয়া ও ব্রিটেনে। মূল দুই অভিযুক্ত ছিলেন ডেনমার্কের কিম ডেভি (নীলস হক ওরফে ক্রিশ্চান নেলসন) ও ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ। তারা ছাড়াও যে বিমান থেকে অস্ত্রবর্ষণ হয়েছিল, তাতে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দয়া এম আনন্দ ওরফে দীপক এবং পাঁচ লাটাভীয়। তদন্তে জানা যায়, ঘটনার আগে ওই বিমানটি ছিল বারাণসীতে এবং চার দিন ওখানে থেকে সেটির দেখভাল করেন ডেভি ও ব্লিচ।

পাঁচ লাটাভীয় গ্রেফতার হলেও অধরা থাকে দুই পাণ্ডা। কিম ডেভির দাবি, বিপদের আশঙ্কা করে তিনি নাকি চেন্নাই বিমানবন্দরের পাঁচিল টপকে পালিয়েছিলেন। ২০১০-এর এপ্রিলে গ্রেফতার হন তিনি। ভারত-রুশ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন স্তরে পাঁচ লাটাভীয়কে মুক্তিদানের আবেদন বিবেচিত হয়। ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের প্রাক্কালে ছাড়া পান ওঁরা। রাষ্ট্রপতির মার্জনা পেয়ে ২০০৪-এ দেশে ফিরে যান ব্লিচ।

তদন্তে দেখা যায়, অভিযুক্ত দুই বিদেশি পাণ্ডার সঙ্গে আনন্দমার্গীদের সম্পর্ক ছিল। গত শতকের নয়ের দশকের গোড়ায় কিম ডেভি আনন্দমার্গীদের গ্রামোন্নয়নের কাজে পুরুলিয়া আসেন। তার আগে ডেনমার্কে একগুচ্ছ ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগ ছিল ওঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে আবার একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন ডেভির মা। আদালত চত্বরে শুনানি চলার ফাঁকে নাকি ডেভি উধাও হয়ে যান। এ কারণে তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বেয়ারফুট রবার’।

অভিযোগ ওঠে আনন্দমার্গীদের হিংসাত্মক নানা কাজের বিরুদ্ধে। ১৯৭১-এর ২৯ ডিসেম্বর এক সতীর্থকে খুন করানোর দায়ে সাজা হয় আনন্দমূর্তির। ১৯৭৮-এর ২ অগস্ট ছাড়া পান তিনি। রেলমন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্রর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ১৯৭৫-এর ২০ মার্চ তারা দিল্লিতে প্রধান বিচারপতি এ এন রায়কে খুনের চেষ্টা করেছিল। আনন্দমার্গীদের তরফে অবশ্য এ সব বানানো এবং তাদের হেয় করার চক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছে বার বার।

ডেনমার্কের উচ্চ আদালত ডেভির বহিষ্কারের আর্জি খারিজ করে দেয়। সিবিআই কিছুকাল আগে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে নতুন করে আবেদন করেছে। সিবিআইয়ের দাবি, বিদেশনীতি আদালতের আর্জি মেনে এ কারণে তৈরি হবে স্পেশাল সেল।

ইয়র্কশায়ারের পিটার ব্লিচের বয়স এখন ৬৩। আর কিম ডেভির ৫৩।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia arms drop case purulia arms drop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE