‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখিয়ে বাঁকুড়ার এক অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারকেরা। তবে শেষরক্ষা হয়নি। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে গুজরাত এবং তেলঙ্গানার চার জায়গায় হানা দিয়ে প্রতারণাচক্রের মোট ৪ পাণ্ডাকে পাকড়াও করল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। সোমবার ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে এসে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত অভিযুক্তদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্যামাপদ মণ্ডল অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। গত ১৭ জানুয়ারি অচেনা নম্বর থেকে শ্যামাপদের মোবাইলে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে মুম্বইয়ের শুল্ক দফতরের আধিকারিক হিসাবে পরিচয় দিয়ে দাবি করেন শ্যামাপদের নামে বিদেশ থেকে আসা কিছু সামগ্রী আটক করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ল্যাপটপ, বেশ কিছু ওষুধ এবং ক্রেডিট কার্ড। তার পর অভিযোগ করা হয়, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতি করেছেন শ্যামাপদ। তাই তাঁকে ‘ডিজিটালি’ গ্রেফতার করা হচ্ছে। ওই মামলাটি ইডি-কে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এমন ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যান প্রবীণ শ্যামাপদ। তার মধ্যে পুলিশের উর্দি পরা একজন ভিডিয়ো কল করেন শ্যামাপদকে। তিনি নিজেকে ইডির আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে আবার ডিজিটাল গ্রেফতারির কথা বলেন। কিছু ক্ষণ বাদে জানান, শ্যামাপদ প্রবীণ নাগরিক বলে তাঁকে একটা সুযোগ দেওয়া হবে। গ্রেফতারি এড়াতে হলে শ্যামাপদকে নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউণ্টে পাঠাতে হবে ১০ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। ঘাবড়ে গিয়ে ওই প্রবীণ আরটিজিএস-এর মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে ভেবেচিন্তে তাঁর মনে হয়, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি বিষ্ণুপুর থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন শ্যামাপদ।
আরও পড়ুন:
এই মামলার তদন্তে বিশেষ দল বা সিট গঠন করে পুলিশ। শ্যামাপদের দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র এবং বিশেষ প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, ভিন্রাজ্য থেকে ওই প্রতারণাচক্র কাজ করেছে। এমনকি, শ্যামাপদের দেওয়া টাকা দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তদন্তকারীরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে অভিযান চালায়। দু’টি দল যায় গুজরাতে এবং একটি দল পৌঁছোয় তেলঙ্গানায়। দুই রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত মোট চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম গৌরাঙ্গ গুজ্জর, পটেল সাহিল, ঠাকুর আনন্দ কুমার এবং সৈয়দ ইউসুফ শরিফ।

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
ধৃতদের মধ্যে গৌরাঙ্গের বাড়ি গুজরাতের গান্ধীনগরে, পটেল থাকতেন গুজরাতের সবরকাণ্ঠা জেলায় এবং ঠাকুর পাটনের বাসিন্দা। সৈয়দের বাড়ি তেলঙ্গানার হায়দরাবাদ জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত চার জনের বয়স ২০ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘প্রতারিতের টাকা প্রথমে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে দ্রুত তিনটি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তী কালে সেই অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা সরিয়ে দেওয়া হয় আরও চারটি অ্যাকাউন্টে। বেশ কিছু টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছিল। আমরা আপাতত কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে রাখার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানিয়েছি। অভিযোগকারীর টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে এই প্রতারণাচক্রে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, তারও খোঁজ চলছে।’’