আদ্রা ডিভিশনের একটি বন্ধ রেলগেট। এই সমস্ত জায়গাতেই পুলিশ মোতায়েনের দাবি উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
তিন মাসের মধ্যে পাঁচটি ঘটনা। রেলগেটে কর্তব্যরত কর্মীরা নিগৃহীত হয়েছেন। মারের চোটে এক জনের পাঁজরের হাড়ও ভেঙেছে। নিরাপত্তার দাবিতে এ বার ডিআরএমের দ্বারস্থ হল মেনস কংগ্রেস। আদ্রা ডিভিশনের সমস্ত রেলগেটে আরপিএফ বা জিআরপি কর্মী মোতায়েন রাখার দাবি তুলেছে রেলকর্মীদের সংগঠনটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ডিআরএম (আদ্রা) শরদকুমার শ্রীবাস্তব।
নিত্যনতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মালগাড়ির সংখ্যাও। রাস্তার উপরে রেল গেট দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বন্ধ রয়েছে— এই ছবিটা আদ্রা ডিভিশনে বেশ চেনা। অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য হারাচ্ছেন অনেকে। চড়াও হচ্ছেন রেলগেটে কর্তব্যরত কর্মীদের উপরে। গত তিন মাসে এই ধরনের পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
মেনস কংগ্রেসের দাবি, প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল আদ্রা-আসানসোল শাখার বার্নপুর কোর্ট রেলগেটে। সংকীর্ণ ওই রাস্তার উপরে এমনিতেই যানবাহনের চাপ বেশি। গত ১৮ এপ্রিল পর পর কয়েকটি ট্রেন যাওয়ায় রেল গেট বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। গেট খুলতেই যানজট হয় রাস্তায়। তার পরেই কেন এত ক্ষণ ধরে গেট বন্ধ ছিল, এই কথা বলে গেট কিপারকে মারধর করে কিছু লোক।
পরের চারটি ঘটনা জুন মাসের। গত ২ জুন মারের চোটে পাঁজরের হাড় ভেঙেছে আদ্রা-বাঁকুড়া শাখার ঝাঁটিপাহাড়ি রেলগেটে কর্মরত করুণ কুম্ভকারের। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পর পর কয়েকটি ট্রেন যাওয়ায় বেশ কিছু ক্ষণ রেল গেট বন্ধ ছিল। গেটের এক প্রান্তে বিয়ে বাড়ির কয়েকটি গাড়ি দাড়িয়েছিল। গাড়িতে থাকা লোকজন গেট খোলার জন্য চাপ দিচ্ছিল করুণের উপরে। কিন্তু সমস্ত ট্রেন পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি গেট খুলতে পারবেন না বলে বুঝিয়ে বলেছিলেন ওই রেলকর্মী। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
২১ জুন মারধর করা হয়েছে আদ্রা-বাঁকুড়া শাখার মেট্যাল সহর-ইন্দ্রবিল স্টেশনের মাঝের রেলগেটের কিপার সুদীপ মিশ্রকে। ২৯ জুন দুই মোটরবাইক আরোহীর হাতে নিগৃহীত হয়েছেন আদ্রার প্রান্তে দুবারড্ডি-জিয়াড়া গ্রামের মাঝের রেল গেটের কর্মী রাজেশ কুমার। ঘটনার পরে সব ক্ষেত্রেই ওই রেলকর্মীরা আরপিএফ ও রেলপুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু এখনও কাউকে ধরা যায়নি।
মেনস কংগ্রেসের দাবি, এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রেলগেটে কর্তব্যরত কর্মীরা। সংগঠনের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও অমর সিংহ বলেন, ‘‘প্রতিটি ঘটনার পরেই নিগৃহীত কর্মীদের নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করা হয়েছিল। ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেননি কর্তৃপক্ষ।” এ বার ডিভিশনের সমস্ত রেলগেটে পুলিশ মোতায়েন করার দাবি তুলেছে মেনস কংগ্রেস। সংগঠনের আদ্রার ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর সুব্রত দে বলেন, ‘‘আমরা ডিআরএমকে জানিয়েছি, ঘটনাগুলিতে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আর গেট কিপারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলগেটে আরপিএফ বা পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। প্রয়োজনে একটি গেটে এক সঙ্গে দু’জন গেট কিপার রাখতে হবে।”
ফাঁকা এলাকায় থাকা রেলগেটে একা কাজ করতে হয় গেট কিপারদের। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জানান, রেল গেট দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে অনেকে তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা করেন। ওই রেলকর্মীদের কথায়, ‘‘অনেকে ভাবেন আমরা ইচ্ছা করে গেট খুলছি না। কিছুতেই বোঝানো যায় না, সমস্ত ট্রেন পার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুতেই গেট খুলতে পারি না।’’
কর্মীদের আতঙ্কিত হয়ে পড়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন ডিআরএম। তিনি বলেন, ‘‘রেলগেটের কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা জানার পরেই সেখানে তদন্ত করতে আরপিএফ ও রেলপুলিশ পাঠানো হয়েছে। তারা ঘটনার তদন্ত করছে। কয়েকটি গেটে আরপিএফ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তবে সমস্ত গেটে রেলপুলিশ বা আরপিএফ রাখা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন এক রেলকর্তা। মারধরের ঘটনায় কাউকে ধরা যাচ্ছে না কেন? আরপিএফ ও রেলপুলিশের দাবি, মারধর করেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে যাচ্ছে। রেলগেটে সিসিটিভি না থাকায় তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy