Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Pradhan Mantri Awas Yojana

তালিকায় নাম, টাকা না-পেয়ে বাস মাটির বাড়িতেই

কেবল ও পার্বতী, দু’জনেরই আক্ষেপ, সরকারি আবাস যোজনার (প্রধানমন্ত্রী আবাস প্লাস) প্রাপক তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাস করতে হচ্ছে মাটির বাড়িতে।

আবাসের উপভোক্তা তালিকায় নাম থাকলেও বাড়ি তৈরির টাকা পাননি দুবরাজপুরের মেজে গ্রামের পার্বতী বাউড়ি।

আবাসের উপভোক্তা তালিকায় নাম থাকলেও বাড়ি তৈরির টাকা পাননি দুবরাজপুরের মেজে গ্রামের পার্বতী বাউড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৩
Share: Save:

বসতবাড়ির দেওয়াল পড়ে গিয়েছে আগেই। অস্থায়ী খড়ের চালা বানিয়ে কোনও ক্রমে সপরিবার বসবাস করেন মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের ফুল্লাইপুর গ্রামের বাসিন্দা কেবল মাল। কিন্তু, যে-ভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ওই চালাঘরটি কত দিন আস্ত থাকে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।

অনেকটা একই অবস্থা দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মেজে গ্রামের পার্বতী বাউড়ির। স্বামীর সঙ্গে ধানজমি লাগায়ো একচালা মাটির বাড়িতেই বসবাস প্রৌঢ়ার। জীর্ণ বাড়িটি এ ভাবে টানা বৃষ্টি সহ্য করতে পারবে কি না, চিন্তায় পার্বতীও।

কেবল ও পার্বতী, দু’জনেরই আক্ষেপ, সরকারি আবাস যোজনার (প্রধানমন্ত্রী আবাস প্লাস) প্রাপক তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাস করতে হচ্ছে মাটির বাড়িতে। গত বছর শেষ ভাগে সমীক্ষা শেষে চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকলেও টাকা না-মেলায় একটা ইটও গাঁথা সম্ভব হয়নি বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এই সমস্যা শুধু পার্বতী বা কেবল মালদের নয়, বীরভূম জেলা জুড়ে হাজার হাজার পাকা ছাদহীন বাসিন্দার। আবাস প্লাসের উপভোক্তা তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন মাটি বা ছিটেবেড়ার ঘরে।

এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রশাসনও। কারণ, টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই কাঁচা বাড়ি ভাঙতে শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে আর্থসামাজিক জাতিগত সমীক্ষা অনুযায়ী যে-সব পরিবার পাকা ছাদহীন বাড়িতে বসবাস করত, তারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছে। কিন্তু, ‘ত্রুটিপূর্ণ’ সমীক্ষার জন্য এর পরেও বহু মানুষ পাকা বাড়ি থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন। জেলা জুড়ে সেই সব পরিবারকে সরকারি আবাসের আওতায় আনতেই আবাস প্লাস যোজনা। নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক উপভোক্তাকে দু’টি কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং বাড়ি তৈরির জন্য ১০০ দিনের কাজে প্রকল্পে ৯০ দিনের মজুরি দেওয়ার কথা।

প্রশাসনের তথ্য বলছে, বীরভূমে আবাস প্লাসে ২ লক্ষ ২৩ হাজার প্রাপকের নাম তালিকায় ছিল। প্রথমে সমীক্ষা ও পরে প্রতিটি গ্রাম সংসদে উপভোক্তাদের নাম নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে বাদ গিয়েছে ৫০ হাজারের বেশি নাম। ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’-এ থাকা ১ লক্ষ ৬৫ হাজারের কিছু বেশি উপভোক্তার মধ্যে গত অর্থবর্ষে (অগ্রাধিকার তালিকা অনুসারে) ৬২ হাজার ৬২১ জনের বাড়ি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। চলতি বছর জানুয়ারির মধ্যে সব পদ্ধতিগত দিক সেরে ফেলেছিল প্রশাসন। ইমারতি দ্রব্য সরবরাহকারী, রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে বৈঠকও হয়।

কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে তার পর থেকে এ দিন পর্যন্ত উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ১ টাকাও ঢোকেনি! জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘টাকা বরাদ্দ না হলে কাজ শুরু হবে কী ভাবে?’’

সিউড়ির তিলপাড়া পঞ্চায়েতের কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূলের নব নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য চিন্তা বাগদিও মাটির বাড়িতে বসবাস করেন। তাঁর নামও আবাস প্লাসের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু, বাড়ির কাজ শুরু হয়নি। চিন্তা জানান, তাঁর এলাকায় এমন অনেক গরিব মানুষ আছেন আবাস প্লাস উপভোক্তা তালিকায়। তাঁরা সকলেই কষ্টে আছেন। দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণপাড়ায় বাস গৌতম রায়ের। আবাস প্লাসের তালিকায় আছেন তিনিও। তাঁর স্ত্রী শ্যামলী রায় বলেন, ‘‘টিনের চাল ফুটো হয়ে বৃষ্টির জল পড়ছে। ভেবেছিলাম, পুজোর আগেই পাকা বাড়ি হয়ে যাবে। কিন্তু টাকাই তো মিলল না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri PMAY
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE