জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক শুরুর আগের দিন মৃত্যু হল মায়ের। শ্মশান থেকে ফিরে চোখের জল মুছে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল দুবরাজপুরের শ্রী শ্রী সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র বিষ্ণু বাগদি। সোমবার এমন ঘটনারই সাক্ষী থেকেছে দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রূপশিমুল গ্রাম।
এ দিন দুবরাজপুরের আরবিএসডি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসে ওই পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, প্রস্তুতি খুব ভাল ছিল। ভাল হত পরীক্ষা। বিষ্ণুর কথায়, ‘‘এই অবস্থায় পরীক্ষা দিতে মনের উপর খুব চাপ পড়েছে। তবু পরীক্ষা দিয়েছি। শুধু মায়ের মুখটা মনে পড়ছিল। বাকি পরীক্ষাগুলোও দেব।’’
রূপশিমুল গ্রামের বাগদি পাড়ায় বাড়ি বিষ্ণুদের। গরিব পরিবার। বাবা ট্র্যাক্টর চালক। দাদা কাজের সূত্রে বাইরে থাকে। রবিবার দুপুরের পর হঠাৎই মত্যু হয় বিষ্ণুর মা পদ্মার। দুই সন্তানের মধ্যে ছোট বিষ্ণু লেখাপড়া চালাক বলে চাইতেন মা। কিন্তু প্রথমে মুখাগ্নি পরে দাহ করে রবিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্মশান থেকে ফিরে আর পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না ওই কিশোরের। কিন্তু তার কাকা শ্যামল বাগদি বোঝান, একটা বছর নষ্ট না করে পরীক্ষা দেওয়ার কথা। সান্ত্বনা দেন পরিবারের অন্যরাও। তার পরে রাজি হয় বিষ্ণু। শ্মশান থেকে ফিরে যে পোশাক পরেছিল, সেই পোশাকেই পরীক্ষা দিয়েছে সে।
এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছিলেন কাকাই। তবে ওই পরীক্ষার্থীর পাশে ছিলেন পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকেরাও। আরবিএসডি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোভন রায় বলছেন, ‘‘মায়ের মৃত্যুর পর পরীক্ষা দেওয়া খুব শক্ত। তবে বিষ্ণু সেটা করেছে।’’ মাধ্যমিকের যুগ্ম কনভেনর চন্দন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা দেরিতে খবর পেয়েছি। তাই সোমবার যেতে পারিনি। তবে ওই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে দুবরাজপুরে যাব। যাতে ও সাহস পায়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)