সুদূর রাজস্থানের জয়সলমীরে গত জন্মের সাকিন খুঁজে পেয়েছিল ‘সোনার কেল্লা’-র মুকুল। স্মৃতি হারিয়ে সেই জয়সলমীরেই পৌঁছে যাওয়া পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির এক যুবক চোদ্দো বছর পরে ফিরলেন ভিটেয়। যোগসূত্র হল সমাজমাধ্যম।
সময়টা ২০১১। এক দিন কাজে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে আর ফেরেননি বাঘমুণ্ডির লহরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত মাহাতো। তাঁর বাবা পেশায় চাষি বৈকুণ্ঠ মাহাতো বলেন, “ছেলের মাথায় একটু গোলমাল ছিল। বাড়ি ছাড়ার পরে অনেক খুঁজেও ওকে পাইনি।” মা কুঁদরিও বলেন, “ছেলের ঘরে ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ওকে ফিরে পেয়ে কী যে ভাল লাগছে!”
কী ভাবে সম্ভব হল কৃষ্ণকান্তের ঘরে ফেরা?
পাশের গ্রামেই বাড়ি স্কুলশিক্ষক জনার্দন মাহাতোর। এলাকার ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে দেন নিয়মিত। কিছু দিন আগে লহরিয়া শিবমন্দির ও অযোধ্যা পাহাড়ের কিছু ছবি ‘পোস্ট’ করেছিলেন। জয়সলমীরের একটি হোটেলে কাজ করা, বছর ছত্রিশের কৃষ্ণকান্তের কথায়, “এক দিন হোটেলের ম্যানেজার মোবাইল ঘাঁটছিলেন। তখনই গ্রামের মন্দির আর পাহাড় দেখে পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। ম্যানেজারকে সব জানালাম। তিনিই জনার্দনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।”
দিন কয়েক আগে ঘরে ফেরা কৃষ্ণকান্তের সঙ্গে এলাকার অনেকে দেখা করতে আসছেন। তবে দেড় যুগ পরে ঘরে ফিরে গ্রাম বা পড়শিদের সে ভাবে চিনতে পারছেন না তিনি। প্রায় ভুলেছেন মাতৃভাষা বাংলাও। কৃষ্ণকান্তকে ফিরিয়ে আনতে জয়সলমীর গিয়েছিলেন এলাকারই বাসিন্দা অমৃত সুকুল। তাঁর কথায়, “গ্রামের ছেলেকে ঘরে ফেরাতে দিনরাত এক করে ২,১০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে জয়সলমীরে পৌঁছই। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা রাজস্থানে কাজ করা এক অবসরপ্রাপ্ত সিআরপি আধিকারিক।”
পাড়ার সবাই প্রশংসা করছেন কৃষ্ণকান্তের স্ত্রী রমলার ধৈর্যেরও। অনেকে জানান, প্রায় দিনই দেখতেন, যুবতী মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময়ে কান্নাকাটি করছেন। তবে আশা ছাড়েননি। তার ফল মিলেছে। কৃষ্ণকান্তের দাবি, এত বছর হোটেলে কাজ করে খাওয়া-পরা ছাড়া আর কিছু মেলেনি। একটু থেমে জোড়েন, “এলাকাটা কত বদলে গিয়েছে। পরিবার ছাড়া সে ভাবে কিছু চিনতে পারছি না। ফিরে যেতে হবে না কি!” মৃদু ধমকের সুরে রমলা বলে ওঠেন, “আর যাও তো দেখি!”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)