Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কাঠফাটা বাঁকুড়ায় ফুটছে পাহাড়ি অর্কিড

ঘর সাজানোর কাজে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে অর্কিডের চাহিদা ব্যাপক। মূলত তাইল্যান্ড থেকেই এই ফুলের আমদানি হয় কলকাতায়। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গে ও বেঙ্গালুরুতেও অর্কিডের চাষ হয়।

যত্ন: বাগানে অর্কিডের দেখাশোনা। নিজস্ব চিত্র

যত্ন: বাগানে অর্কিডের দেখাশোনা। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ১৩:৪০
Share: Save:

পাহাড়ের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার গাছ দিব্যি রঙিন ফুল ফোটাচ্ছে রোদে জ্বলা বাঁকুড়ায়। নিজের বাড়ির ছাদে অর্কিড ফুটিয়ে প্রায় অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন বাঁকুড়ার কিছু প্রবীণ ফুল প্রেমী। একরাশ বিস্ময় নিয়ে তা দেখতে ভিড় করছেন বাসিন্দারা।

বছর পাঁচেক ধরে নিজের বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড ফোটাচ্ছেন প্রতাপবাগানের বাসিন্দা চিকিৎসক মণীন্দ্রনাথ শীল, যোগেশপল্লির অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুধাময় ঘোষ, ফিডাররোডের বাসিন্দা ব্যাঙ্ক কর্মী স্বয়ংপ্রকাশ মুখোপাধ্যায়, পাঠকপাড়ার সরকারি কর্মী গণেশ মিশ্র, গোবিন্দনগরের অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বাসুদেব চৌধুরীরা। তাঁরা সবাই বাঁকুড়া ফ্লোরি কালচার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। মণীন্দ্রনাথবাবু, সুধাময়বাবুরা বলেন, “আমাদের এই চরমাভাবাপন্ন এলাকায় চ্যালেঞ্জ নিয়েই অর্কিড চাষে নেমেছিলাম। সাফল্যও পেয়েছি।”

তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেনড্রোবিয়াম, ভ্যান্ডা, ক্যাটলেয়া, অনসিডিয়াম-এর মতো ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড বাঁকুড়ায় ফুটিয়েছেন তাঁরা। সুধাময়বাবুর বাড়ির উঠোনে বেশি কিছুটা জায়গার উপরে ছাউনির নীচে অর্কিড চাষ হচ্ছে। অর্কিডের ফুলে ফুলে সেখানে যেন রঙের মেলা বসেছে।

ছোট ছোট টবে ঝুলছে অর্কিড। টবে মাটির বদলে নারকেলের ছোপড়া, কাঠকয়লা, ঝামা-ইট দেওয়া রয়েছে। ওই সব উপকরণকে আঁকড়েই টবের বাইরে ঝুলছে অর্কিড। অর্কিডের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফোটে বিভিন্ন সময়ে। কোনও প্রজাতি বছরে এক বার, কোনওটি দু’বার, কোনওটি আবার বছরভর ফুল দেয় বলে জানাচ্ছেন সুধাময়বাবুরা। তবে মেহনত কম নয়। পাহাড়ি এলাকার মতো স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ সৃষ্টি করতে ছায়াজালের ভিতরে গাছগুলি রেখে বারবার জল ছড়াতে হয়। উদ্যানপালন দফতরের বিশেষজ্ঞ মলয় মাজির কথায়, “উপরে ছায়া থাকলে রোদ ভিতরে ঢুকতে পারবে না। এরপর বারবার গাছে জল ছড়ালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কিছুটা বেড়ে গিয়ে ভিতরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দিনে অন্তত তিন বার গাছে জল ছড়াতে হয়।’’

ফুল প্রেমীদের ওই সংগঠনের সুবাদে তৎকালীন জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক সুপ্রতীক মৈত্রের সংস্পর্শে আসেন ওই পাঁচ ব্যক্তি। সুপ্রতীকবাবুই তাঁদের অর্কিড চাষে উদ্ধুদ্ধ করেন। সুপ্রতীকবাবু বর্তমানে বর্ধমান জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক। তিনি জানাচ্ছেন, পূর্বস্থলীর বহু চাষি সাফল্য পেয়ে বাণিজ্যিক ভাবে অর্কিড চাষের চিন্তাভাবনা করছেন। সুধাময়বাবুর মতে, উদ্যানপালন দফতর উৎসাহী হলে বাঁকুড়াতেও বাণিজ্যিক ভাবে অর্কিড চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘর সাজানোর কাজে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে অর্কিডের চাহিদা ব্যাপক। মূলত তাইল্যান্ড থেকেই এই ফুলের আমদানি হয় কলকাতায়। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গে ও বেঙ্গালুরুতেও অর্কিডের চাষ হয়। বাঁকুড়ার ফুল ব্যবসায়ী বরেন সরকার বলেন, “বহু ক্রেতাই অর্কিড কিনতে আসেন। কলকাতার বাজার ছাড়া অর্কিড মেলে না। তাই আগাম বরাত নিয়েই আমরা অর্কিড নিয়ে আসি।”

গত কয়েক বছরে বিকল্প চাষ হিসেবে বাঁকুড়ায় ফুল চাষের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। এখন জেলায় ১০৬ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। জেলা উদ্যানপালন দফতরের ফিল্ড অফিসার সঞ্জয় সেনগুপ্ত জানান, ফুলচাষিদের বাজার গড়ে দিতে বড়জোড়ায় একটি ফুল মান্ডিও গড়ার প্রকল্প নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য অ্যাগ্রোইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “অর্কিড চাষ লাভজনক হতে পারে। যাঁরা বাড়িতে ওই ফুল চাষ করেছেন তাঁদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করব।” জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মিলনচন্দ্র বেসরা জানান, জেলাতে জাভেরা ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। অর্কিড নিয়েও তাঁরা ভাবনা চিন্তা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Orchid অর্কিড Cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE