E-Paper

মন ভাল রাখতে প্রতিমা গড়ছে কিশোর

পরিবার সূত্রে জানা গেল, সোমনাথের বয়স যখন আড়াই তখন ওর মা মারা যান। সোমনাথ এখন থাকে দাদু, দিদিমার কাছে।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৩৯
সরস্বতী গড়ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোমনাথ ডোম। দুবরাজপুরের জোপলাই গ্রামে।

সরস্বতী গড়ছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোমনাথ ডোম। দুবরাজপুরের জোপলাই গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে, মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। অন্য দিকে, সরস্বতী প্রতিমা গড়ার কাজ।

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এ ভাবে দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হচ্ছে দুবরাজপুরের জোপলাই গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সোমানাথ ডোমকে। কারণ, নিজের বাড়ির সরস্বতী প্রতিমা ছাড়াও গ্রামের তিনটি ও পাশের গ্রামের একটি মিলিয়ে— মোট পাঁচটি প্রতিমা গড়ার দায়িত্ব তার কাঁধে।

জানা গেল, ২৩ সালে এলাকার একটি দুর্গা প্রতিমা গড়ার পরেই কদর বাড়ে সোমনাথের। সরস্বতী গড়ার বরাত উপেক্ষা করতে পারেনি সে। ব্যস্ততা সেই কারণেই। “পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই সরস্বতী পুজো। তখন তো আর প্রতিমা গড়ার সুযোগ পাব না। তাই পরীক্ষার আগেই প্রতিমা গড়া শেষ করতে হবে।” সকাল ১১টা নাগাদ প্রতিমা গড়ার ফাঁকে জানাল ওই কিশোর।

তা হলে পরীক্ষার সময় কাজ নিলে কেন? ‘‘আমার যে খুব ভাল লাগে ঠাকুর গড়তে। তা ছাড়া মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ছুটি কাটানোর সময়ে হাতে কিছু টাকাও এসে যাবে,’’ স্পষ্ট উত্তর ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর।

পরিবার সূত্রে জানা গেল, সোমনাথের বয়স যখন আড়াই তখন ওর মা মারা যান। সোমনাথ এখন থাকে দাদু, দিদিমার কাছে। দিদিমা কল্পনা ডোম এলাকার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা তথা লোবা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রাক্তন প্রধান। কাছের জোপলাই হাই স্কুলে ভর্তি করার পাশাপাশি ছোট থেকে নাতির মাটির পতুল তৈরির নেশাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন কল্পনা। সেই প্রশ্রয়েই লেখাপড়া করতে করতে কিশোর সোমনাথ সপ্তম শ্রেণিতে থাকার সময়ে ঠাকুর গড়া শিখেছে এলাকার এক মৃৎশিল্পীর কাছ থেকে।

পরিবার ও স্থানীয়েরা বলছে, এখন রীতিমত ভাল প্রতিমা গড়ে সোমনাথ। প্রশংসা পাওয়ার সঙ্গে কদরও বাড়ছে তার। প্রমাণ একাধিক সরস্বতী তৈরির বরাত। সোমনাথ জানায়, এক একটি প্রতিমার দাম গড়ে ১,২০০ টাকা। কল্পনা বলেন, ‘‘নাতি ভাল ঠাকুর গড়ে, এটা এখন এলাকায় ছড়িয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ওর শখ পূরণে আমরা বাধা দিইনি। যদি ভবিষ্যতে এই পথে স্বনির্ভর হতে পারে হোক।’’

সোমনাথ বলে, ‘‘মন দিয়ে লেখাপড়া করছি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ঠাকুর না গড়লে আমার মন ভাল থাকে না। লোকজন ভাল বলছে। তবে আমার ইচ্ছে এক দিন খুব বড় মৃৎশিল্পী হব। কুমোরটুলি বা কৃষ্ণনগরে গিয়ে প্রতিমা তৈরি শিখতে চাই কোনও বড় শিল্পীর কাছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dubrajpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy