সমাজের একাংশের কাছে ওঁরা এখনও ব্রাত্য। সেই বৃহন্নলা সমাজেরই এক জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরীকে রক্ত দিয়ে পাশে দাঁড়ালেন।
ছোটবেলায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা পেয়েছিলেন পুরুলিয়া শহরের কসাইমহল্লার বাসিন্দা জয়া সেন। তাই শনিবার পুরুলিয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ১৫ বছরের কিশোরী রক্তের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে শুনে বসে থাকতে পারেননি। এগিয়ে গিয়ে তিনি রক্তদান করেছেন।
ওই কিশোরীর দাদা কৌশিক রায় বলেন, ‘‘বোনের দুই প্যাকেট ‘ও পজ়িটিভ’ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এক প্যাকেট কোনও ভাবে জোগাড় হলেও আর একটা পাওয়া যাচ্ছিল না। শহরের যুবক আসিফ আনসারির সঙ্গে পুরুলিয়া মেডিক্যালে দেখা হয়। তাঁকে সব জানাই। তিনিই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রুমি পারভিনকে ফোন করেন। পরে রুমির কথায় জয়া রক্ত দিতে পুরুলিয়া মেডিক্যালে আসেন। তিনি বৃহন্নলা হলেও বিপদে দেবদূতের মতো আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ঋণ শোধ
করা যাবে না।’’
জয়া বলেন, ‘‘আমার পরিবার বলতে কিছু নেই। গুরুমায়ের কাছে শুনেছি ছ’মাস বয়সে বাবা-মা ছেড়ে চলে যান। কিন্তু মানুষের প্রয়োজন হলে যেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, গুরুমা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছেন। এর আগেও আমি একবার রক্ত দিয়েছি। প্রয়োজনে আবার দেব। দরকার হলে আমার মত লক্ষ লক্ষ জয়া মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবেন।’’ রক্ত দিয়ে কেমন লাগছে? জয়া বলেন, ‘‘রক্ত দিয়ে এক বোনের সাহায্য করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আমরাও চাই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে। তাঁদের জন্য কিছু করতে।’’
জয়াকে রক্তদানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া রুমি বলেন, ‘‘আমি রক্ত সংগ্রহের কাজে মানুষকে যথাসাধ্য সাহায্য করি। তবে রক্তদানে মানুষকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আমি স্বপ্ন দেখি থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ার। জয়াকে অনেক ধন্যবাদ। তাঁদেরও যে অন্যের কষ্টে প্রাণ কাঁদে, এ কথা সবার ভেবে দেখার সময় এসেছে। অথচ আমরা এখনও তাঁদের ব্রাত্য করে রেখেছি। আমার সঙ্গে ওঁদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষের যে কোনও প্রয়োজনে
ওঁরা পাশে দাঁড়ান।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)