Advertisement
E-Paper

স্ত্রীকে থেঁতলে খুন, স্বামীর দেহ ঝুলে গাছে

মেলায় ঘুরতে যাচ্ছেন বলে মোটরবাইক নিয়ে বেড়িয়েছিলেন দম্পতি। কিন্তু তাঁরা আর ফেরেননি। পরের দিন দুপুরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পুকুরে মিলল স্ত্রীর দেহ। পাশের গাছে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মিলল স্বামীর দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৬

মেলায় ঘুরতে যাচ্ছেন বলে মোটরবাইক নিয়ে বেড়িয়েছিলেন দম্পতি। কিন্তু তাঁরা আর ফেরেননি। পরের দিন দুপুরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পুকুরে মিলল স্ত্রীর দেহ। পাশের গাছে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মিলল স্বামীর দেহ। নিতুড়িয়া থানার বলরামপুর ও পাবড়ার মাঝে ক্যাতায়ণী মন্দিরের কাছে সোমবার বিকেলে দেহ দু’টি উদ্ধার হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন কুড়ান মিশ্র (২৬) ওরফে বুড়ো এবং তাঁর স্ত্রী কল্যাণী মিশ্র (২১)। নিতুড়িয়া থানার বলরামপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি। পুলিশ মৃত্যুর কারণ জানতে দেহদু’টি ময়নাতদন্তে পাঠায়। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। রঘুনাথপুরের এসডিপিও গোপাল গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে হচ্ছে স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন ওই যুবক। খুন ও আত্মহত্যার দু’টি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” কিন্তু পুলিশের এই তত্ত্বের পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা খোলসা করতে পারেননি পুলিশ কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্য কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

রঘুনাথপুরের ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকা শ্রমিক কুড়ানের সঙ্গে বছর দুই আগে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বেদানন্দ ঝা-এর মেয়ে কল্যাণীর বিয়ে হয়। এক বছরের মধ্যে কল্যাণী সন্তানসম্ভবা হলেও গর্ভেই ভ্রুণের মৃত্যু হয়। পড়শিরা জানাচ্ছেন, রবিবার বিকেলে স্ত্রীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কুড়ান। তাঁরা জানিয়ে গিয়েছিলেন, আনাড়ায় রাজীব গাঁধী উৎসব দেখতে যাচ্ছেন। মৃত যুবকের কাকা পান্ডন মিশ্র বলেন, ‘‘রাতে ওরা বাড়ি না ফেরায় আত্মীয়স্বজনদের কাছে খোঁজ নিতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু কেউ হদিস দিতে পারেননি।’’

বলরামপুরে বাস করলেও কুড়ানের আদি বাড়ি পাশের পাবড়া গ্রামে। সোমবার বেলায় বলরামপুর ও পাবড়ার মাঝে ক্যাতায়ণী মন্দিরে ঢুকে পুরোহিত দেখেন, ভিতরে চাপ চাপ রক্ত পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা খবর পেয়ে মন্দিরে এসেছিলেন। তাঁরাই খোঁজ করে মন্দিরের পিছনে একটি গাছে কুড়ানের গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। খবর দেওয়া হয় কুড়ানের পরিবার ও রঘুনাথপুর থানায়। পুলিশ কুড়ানের দেহ উদ্ধার করে।

এ দিকে মন্দিরের ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে থাকায় ও কল্যাণীর খোঁজ না পাওয়ায় পুলিশ আশপাশে তল্লাশি শুরু করে। বিকেলের দিকে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে পুকুরে কল্যাণীর দেহ ভাসতে দেখা যায়। সেই পুকুরের পাড়ে পড়েছিল ওঁদের মোটরবাইকটি। পুলিশ দু’টি দেহ উদ্ধার করে রাতে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে কল্যাণীর দেহের সুরতহাল করেন রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমানি। পুলিশ জানিয়েছে, পাথরের মতো ভারী কিছু দিয়ে কল্যাণীর মুখ ও মাথায় একাধিক আঘাত করা হয়েছিল। পরে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ওই দড়ি দিয়েই কুড়ান আত্মহত্যা করেছেন।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে অন্ধকারে কুড়ান ও তার স্ত্রীর পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে পুরুলিয়ায় মর্গে এসেছিলেন কল্যাণীর বাবা বেদানন্দবাবু। তিনি ও কুড়ানের কাকা পাণ্ডববাবু দু’জনেই বলেন, ‘‘কেন এই ঘটনা কিছুই বুঝতে পারছি না।” পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে ওই দম্পতির মধ্যে বিবাদ ছিল না বলেই জানাচ্ছেন তাঁদেপ পড়শিরা। বিদেশ মিশ্র নামের এক পড়শির কথায়, ‘‘কুড়ান ও কল্যাণীকে কখনও অশান্তি করতে এলাকার কেউ দেখেননি। দু’জনের মধ্যে সদ্ভাবই দেখেছি। কী ভাবে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।”

Nituria Abnormal death Suicide Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy