দামোদর থেকে রঘুনাথপুরে জল এলেই সেখান থেকে জল যাবে পুরুলিয়া শহরে। জেলায় প্রশাসনিক সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই আরও গতি পেয়েছে রঘুনাথপুরের নতুন জলপ্রকল্প।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তারা ইতিমধ্যেই দফায় দফায় আলোচনা সেরেছেন রঘুনাথপুর পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে। আলোচনায় স্থির হয়েছে, রঘুনাথপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রঘুনাথপুর ২ ব্লকে দামোদরের করগালি ঘাট থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল আনা হবে। রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুর দফতরের কর্তা ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে পুরসভার একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গেও আমরা যৌথ ভাবে বৈঠক ও নদীঘাট পরিদর্শন করেছি। জল প্রকল্পের বিশদ রিপোর্ট তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর দামোদর থেকে রঘুনাথপুরে জল আনার ঘোষণার আগেই রঘুনাথপুর পুরসভা এই প্রকল্পে হাত দেয়। মাস দুয়েক আগেই রঘুনাথপুরে একটি জল প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে রঘুনাথপুর পুর এলাকার জন্য একটি জল প্রকল্প অনুমোদনের আবেদন করেন স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি। উদ্বোধনের মঞ্চ থেকেই পুরমন্ত্রী দু’দফায় এই প্রকল্পের জন্য তাঁর দফতর থেকে অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস দেন।
রঘুনাথপুর পুর-এলাকার জন্য একটি জল প্রকল্প বর্তমানে আছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সেই ইন্দো-জার্মান জল প্রকল্পের মাধ্যমে পুরসভাকে জল দেওয়া হয়। তবে পুরসভা জল সরবরাহে স্বনির্ভর হতে চাইছে। রঘুনাথপুর শহরে দৈনিক জলের চাহিদা ৩০ লক্ষ লিটার। ইন্দো-জার্মান প্রকল্প থেকে কমবেশি ২০ লক্ষ লিটার জল পাওয়ার কথা। বাকি জল পুরসভা নিজের গভীর টিউবওয়েল থেকে তোলে। কিন্তু বাস্তবে ইন্দো-জার্মান প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৫ লিটার জল মেলে বলে পুরসভার দাবি। তীব্র গরমে জলের পরিমাণ আরও কমে যায়। পুরসভার নিজস্ব গভীর নলকূপ থেকে গরমের সময়ে চাহিদমতো জল পেতে সমস্যা হয়। পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘জল সরবরাহে পুরোপুরি স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যেই নতুন প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, নতুন প্রকল্পে দৈনিক দেড় কোটি লিটার জল রঘুনাথপুরে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। করগালি ঘাটে দামোদরের নাব্যতা উপযুক্ত হওয়ায় সেখান থেকে ওই পরিমাণ জল পাওয়া সম্ভব। ২০ কিলোমিটার পাইপ লাইন পেতে, নদীর পাশে পাম্প হাউস তৈরি করে, শহরের প্রান্তে পরিশোধন কেন্দ্র গড়ে পুরোদস্তুর জল প্রকল্প তৈরিতে পুরসভার খরচ হবে ৩২ কোটি টাকা। আগের জল প্রকল্প তৈরির পরে উদ্বৃত্ত থাকা ৩ কোটি টাকায় নতুন প্রকল্পের ডিপিআর (ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরির কাজ হবে। বাকি টাকা চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, রঘুনাথপুর শহরের প্রান্তে বাবুগ্রাম পঞ্চায়েতের রক্ষতপুর গ্রামের অদূরে প্রায় এক একর জমি জল পরিশোধন কেন্দ্রের জন্য পুরসভাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জল প্রকল্পের পরিশোধন কেন্দ্রের জন্য পঞ্চায়েত এলাকার সরকারি জমি পুরসভাকে দিতে সমস্যা হবে না। নদীঘাটে পাম্প হাউস তৈরির জন্য জমি পেতে সমীক্ষা শুরু হয়েছে।’’
দামোদর থেকে জল তুলে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ডিভিসি-র অনুমোদন প্রয়োজন। প্রকল্পের জন্য ৩২ কোটি টাকা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দেবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে। যদিও বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবুর বক্তব্য, ‘‘খোদ মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, দামোদর থেকে রঘুনাথপুরে জল এনে পুরুলিয়া শহরে নিয়ে যেতে। ডিভিসি-র সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সম্মতি পেতে হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু প্রকল্প তৈরিতে সমস্যা হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy