Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Alcoholism

পান-বিড়ির আবডালে শিবা, ডিম্পা 

দিন দিন দলে ভারী হচ্ছে নেশাড়ুরা। বাড়ছে ছিঁচকে চুরি। নানা কিসিমের অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠে আসছে। শহরের নেশাড়ুদের দাপট এখন এতটাই, প্রতিবাদ করার আগে পাঁচ বার ভাবেন বাসিন্দারা।

নাকের ডগায়: ঝালদা পুরসভা চত্বরে একটি ছাদে গড়াগড়ি যাচ্ছে কাশির ওষুধের খালি বোতল। নিজস্ব চিত্র

নাকের ডগায়: ঝালদা পুরসভা চত্বরে একটি ছাদে গড়াগড়ি যাচ্ছে কাশির ওষুধের খালি বোতল। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝালদা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০৯
Share: Save:

পারমাণবিক বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত একটা দেশে ছোট্ট একটা শহর। খেলনার করাখানাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে যে ক’টা লোক রয়েছে, সর্বক্ষণ সস্তার কাশির ওষুধের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে তারা। নবারুণ ভট্টাচার্যের উপন্যাসের মরতে মরতে বেঁচে থাকা ‘খেলনানগর’-এর সঙ্গে কিছু মিল যেন হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে যায় ঝালদা শহরের কোনও কোনও কোণে। বাসস্ট্যান্ড থেকে লিহিরবাঁধের পাড় ধরে এগোলেই যেমন দেখা যাবে, ছড়িয়ে রয়েছে কাশির ওষুধের শিশি। গড়াগড়ি খাচ্ছে পুরসভা চত্বরের মধ্যে একটি ছাদে। পুলিশ মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায়। কয়েক দশক ধরেই চালিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে অবস্থার হেরফের বিশেষ হয়নি।

দিন দিন দলে ভারী হচ্ছে নেশাড়ুরা। বাড়ছে ছিঁচকে চুরি। নানা কিসিমের অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠে আসছে। শহরের নেশাড়ুদের দাপট এখন এতটাই, প্রতিবাদ করার আগে পাঁচ বার ভাবেন বাসিন্দারা। সামনেই ঝাড়খণ্ড। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পড়শি ওই রাজ্য থেকেই চোরাপথে চলে আসে কাশির সিরাপ। অবৈধ ভাবে কেনাবেচা চলে অলি-গলির চায়ের দোকান, পানের দোকানে। শহরের বেশ কিছু ওধুধের দোকান থেকেও প্রেসক্রিপশন ছাড়াই লুকিয়ে ওই ওষুধ বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এমনকি, কাশির ওষুধ নেশা করার জন্য বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের পাতা জালে ধরা পড়েছেন শহরের কোনও কোনও বাড়ির বধূও।

খোলামকুচির মতো সহজেই মেলে। গন্ধ ছড়ায় না। দেখা যাচ্ছে, নিছক কৌতূহলেই উঠতি বয়সের অনেকে চট করে এই নেশার ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। আর তার পরে আসক্তি থেকে মুক্তি মিলছে না সহজে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের এই অবৈধ কারবারে কেন লাগাম পরানো যাচ্ছে না? পুলিশের দাবি, শিকড়টা ছড়িয়ে গিয়েছে গভীরে। প্রায়ই ক্ষেত্রেই নেশার কবলে পড়ে পেশার জালে জড়িয়ে যায় অনেকে। এক সময় যারা নেশায় আসক্ত ছিল, তাদেরই কয়েক জন এখন এই সিরাপ-চক্রের অন্যতম পাণ্ডা। পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘দেখা যায়, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কোনও কোনও সিরাপের কারবারি সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার বদলে প্রায়ই আবার পুরোনো ধান্দায় ফিরে যাচ্ছে।’’

লোকের চোখে ধুলো দিতে কাশির সিরাপ নেশার জন্য বিক্রি করার সময়ে সাংকেতিক নাম ব্যবহার করা হয় ঝালদা শহরে। এখন যেমন শোনা যাচ্ছে, ‘শিবা’, ‘ডিম্পা’। কিছু দিন পরেই এই নাম বদলে যাবে বলে জানাচ্ছেন ওয়াকিবহাল লোকজন। তলে তলে আরও অনেক ফন্দিই আঁটে কারবারিরা। কিছু দিন আগেই বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি অবৈধ ভাবে কাশির ওষুধ বিক্রির সময়ে খোদ ঝালদা থানার আইসির হাতে ধরা পড়ে যান ওষুধের দোকানের মালিক ও এক কর্মচারী। বাজেয়াপ্ত করা হয় বেশ কয়েক বোতল সিরাপ। সেগুলি অন্য ওষুধের প্যাকেটে এমন ভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, যে হদিস পেতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল পুলিশের।

ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারের কথায়, ‘‘বিষয়টা সত্যিই খুব আশঙ্কার। লক্ষ করছি, দিন দিন ঝালদা শহরে নেশার জন্য কাশির সিরাপের ব্যবহার বাড়ছে। তবে শুধু পুলিশ দিয়ে এটা বন্ধ করা যাবে না। সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের।’’ আজকাল সন্ধ্যা নামলে শহর ছাড়িয়ে নেশার ছায়া ঝালদা লাগোয়া অন্য থানা এলাকাতেও পড়ছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। রাত পর্যন্ত চলছে নেশাড়ুদের আড্ডা। এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছিল এসডিপিও (ঝালদা) সুমন্ত কবিরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘মাঝে-মধ্যেই আমরা অভিযান চালাই। কিছু দিন আগে শহরে এই নিয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। আবার অভিযান হবে। তবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই এ জিনিস বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcoholism Jhalda Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE