E-Paper

আদিবাসী গ্রামে মন্ত্রী গেলেই বিক্ষোভের ডাক

মন্ত্রী সন্ধ্যারানি অবশ্য এই অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, আন্দোলনকারীরা ইনটিমেশন লেটারে মন্ত্রীর সই, স্ট্যাম্প চেয়েছিলেন । সেটা তো বাড়িতে সম্ভব নয়। ওটা পেতে গেলে অফিসে যেতে হত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৬
জনজাতি সংগঠনের মিছিল মানবাজারে। নিজস্ব চিত্র

জনজাতি সংগঠনের মিছিল মানবাজারে। নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর বিরুদ্ধে অসন্তোষ আদিবাসীদের! আদিবাসীদের ৪২টি সংগঠনের মঞ্চ ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অর্গানাইজ়েশন’-এর পক্ষ থেকে বুধবার মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তেমনই ইঙ্গিত মিলল।

সংগঠনের এক কর্তা জানান, বুধবার রাজ্যের আদিবাসী বিধায়ক ও সাংসদদের কাছে দাবিপত্র পেশের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের সর্বত্র আদিবাসী জনপ্রতিনিধিরা সেই স্মারকলিপি জমা নিয়েছেন। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে তৃণমূল বিধায়ক রাজীব সরেন ও কাশীপুরের বিধায়ক বিজেপির কমলাকান্ত হাঁসদাও স্মারকলিপি নিয়ে অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু মানবাজারের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করেন বলে দাবি। এমনকি ইনটিমেশন লেটারেও তিনি নিজে সই করেননি। সই করেছেন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশকর্মী।

ফোরামের মুখপাত্র রতনলাল হাঁসদা বলেন, ‘‘ওঁর বিধায়ক পদলাভে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বড় ভূমিকা রয়েছে। এখন উনি আদিবাসীদের দাবিদাওয়াকে উপেক্ষা করছেন।’’ প্রতিবাদে এ দিনই সংগঠনের পক্ষ থেকে মানবাজার শহরে মিছিল ও বাসস্ট্যান্ডে ধিক্কার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী দিনে মন্ত্রী আদিবাসী গ্রামে গেলে কালো ব্যাজ পরে ধিক্কার জানানো হবে।

মন্ত্রী সন্ধ্যারানি অবশ্য এই অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, আন্দোলনকারীরা ইনটিমেশন লেটারে মন্ত্রীর সই, স্ট্যাম্প চেয়েছিলেন । সেটা তো বাড়িতে সম্ভব নয়। ওটা পেতে গেলে অফিসে যেতে হত। মন্ত্রীর স্বামী গুরুপদ টুডুরও দাবি, যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য রেখেই কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু সংগঠনের কর্তারা সাধারণ আদিবাসী ভাইবোনেদের ভুল বোঝাচ্ছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, সংগঠনের কর্তাদের একাংশ বিজেপি ও সিপিএমের হয়ে কাজ করছেন। মন্ত্রী মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি জমার কথা বলেছিলেন বলেও তিনি জানান।

তবে ফোরামের অন্যতম কর্তা নারায়ন মান্ডি বলেন, ‘‘আমরা তো প্রশাসনিক আধিকারিকদের আমাদের দাবি জানাচ্ছি না। তাহলে এসডিওর চেম্বারে দাবি জানাব কেন?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘স্মারকলিপি জমা নিতে যিনি টালবাহানা করেন, তিনি আদিবাসীদের কী উন্নয়ন করবেন!’’ বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর আবার দাবি, ‘‘তৃণমূলের সরকার আদিবাসী বিরোধী। মন্ত্রী সন্ধ্যারানি আদিবাসী বিক্ষোভে ভয় পেয়ে স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করেছেন। এটা জনরোষের প্রতিফলন।’’

বন্ধ থাকা আদিবাসী হস্টেল চালু করা, আদিবাসীদের বনের অধিকার ফেরানো, জাল শংসাপত্র চিহ্নিতকরণ ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের শাস্তির ব্যবস্থা, বাঘমুন্ডিতে প্রকৃতি ধ্বংস রোধ প্রভৃতি দাবি এ দিন ফোরামের পুরুলিয়া ইউনিটের পক্ষ থেকে তোলা হয়। এই কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকে মানবাজার শহর বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে কার্যত নিরাপত্তায় মোড়া ছিল। রাইস মিল থেকে কয়েকশো জনজাতির মানুষ মিছিল করে বাসস্ট্যান্ডের মঞ্চে আসেন।

রানিবাঁধ ও রাইপুরের বিধায়ক যথাক্রমে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি ও মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের তরফে ছিলেন দিলেশ্বর মান্ডি, অনন্ত টুডু, বিপ্লব সরেন, গৌরাচাঁদ মুর্মুরা। দুই বিধায়ক জানান, তাঁদের দাবি সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

manbazar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy