Advertisement
E-Paper

ফুঁসছে নদী, ত্রাণ প্রস্তুতি প্রশাসনের

টানা বৃষ্টিতে সোমবার বাঁকুড়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের উদিতি এলাকা জলমগ্ন হয়। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও স্থানীয় কাউন্সিলর অলকা সেন মজুমদার এলাকায় নালা কাটিয়ে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৬
দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণবাঁধে জল উপচে পড়েছে। তার মধ্যে চলছে মাছ ধরা।

দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণবাঁধে জল উপচে পড়েছে। তার মধ্যে চলছে মাছ ধরা।

গত ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে জল বেড়ে ইতিমধ্যেই ফুঁসছে জেলার নদনদীগুলি। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি আরও ক’দিন স্থায়ী হয়ে পারে। সব দিক বিবেচনা করে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি শুরু করে দিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।

জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬৫.৩ মিলিমিটার। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে দ্বারকেশ্বর নদ। বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী-র নদী পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলিতে জারি হয়েছে সতর্কতা। কোতুলপুরের মদনমোহনপুর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সেখানকার ২১টি পরিবারকে স্থানীয় স্কুলে সরিয়ে আনা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া জেলা জুড়ে তিন হাজার মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল বিলি করা শুরু হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বৃষ্টি আরও ক’দিন চলতে পারে বলেই পূর্ভাবাস রয়েছে। তাই বন্যাপ্রবণ ব্লকগুলিতে খাবার, কেরোসিন, রান্নার কাঠ মজুদ করা শুরু হয়েছে। পুনর্বাসন দেওয়ার স্থানও চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। যাতে ডাইরিয়া না ছড়ায়, স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমরাও সেদিকে নজর রাখছি।”

টানা বৃষ্টিতে সোমবার বাঁকুড়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের উদিতি এলাকা জলমগ্ন হয়। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও স্থানীয় কাউন্সিলর অলকা সেন মজুমদার এলাকায় নালা কাটিয়ে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “গোটা শহরের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। অনেক রাত পর্যন্ত পুরকর্মীরা পুরসভায় থাকছেন। কোথাও জল জমার খবর আসলেই যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায় সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।” তিনি জানান, বাঁকুড়া শহরে কোথাও জল জমার সমস্যা হলে জরুরী ভিত্তিতে পুরপ্রধানকে ৯৪৩৪৩১৫০৫২ —এই নম্বরে ফোন করতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সোনামুখী-দুর্গাপুর রাস্তায় নফরডাঙা গ্রামের কাছে নির্মীয়মাণ সেতুর পাশে পুরনো কজওয়ে এখনও জলের তলায় রয়েছে। পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। যাতায়াত বন্ধ। কোতুলপুরে লেগো গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিঠ্যা থেকে কোতুলপুর শহরে যাওয়ার রাস্তায় কজওয়েও দু’দিন ধরে জলের তলায়। ওই রুটে দু’টি বাস চলে। সেগুলি বন্ধ। ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপার চলছে। পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে কোনও পাহারা সেখানে দেখা যায়নি। বালিঠ্যার পাশের গ্রাম ব্রাহ্মণডিহাতে সোমবার বিকেল থেকে ঢুকতে শুরু করেছে আমোদরের জল। কোতুলপুর ব্লকের মদনমোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লালকি গ্রামে ত্রাণশিবির করে দশটি পরিবারকে এনে রাখা হয়েছে। তবে ওই গ্রামে জল ধীরে ধীরে নামছে বলে জানা গিয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরুলিয়ার ঝালদা-খামার রাস্তার একটি কালভার্ট। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তার ওলগাড়া গ্রামের কাছে কালভার্ট সংলগ্ন রাস্তার একটি দিক ধুয়ে যাওয়ায় সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার করছেন। ঝালদা ১ ব্লকের ঝালদা-তানাসি রাস্তার বেশ কিছুটা টানা বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়ায় ওই গ্রামে ঢোকার রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মানুষজন চাতমঘুটু হয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করছেন। দ্রুত রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।

রবিবার সকালে রঞ্জনডি জলাধার ভেঙে যাওয়ায় এখনও পর্যন্ত ২০০ একর জমি প্লাবিত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কাশীপুর ব্লক সংলগ্ন এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির জেরে ৬০টি কাঁচা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। দুর্গতদের ত্রিপলও দেওয়া শুরু করেছে প্রশাসন।

বান্দোয়ানের কুমড়া কুইলাপাল এলাকায় কয়েকটি রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। তবে, সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কাঁসাই, কুমারী, টটকো নদীতে বেশি জলস্ফীতি হয়নি।

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিটি ব্লকে বিডিওদের কন্ট্রোল রুম খুলতে বলা হয়েছে।

এ দিকে, সোমবার সকালে সোনামুখীতে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে শৌচ করতে গিয়ে বিদ্যুতের ওভারহেড তারে ছাতার শিক ঠেকে গিয়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গাজু বাউড়ি (৫৫) সোনামুখীর পলাশডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা। এ দিন সকাল পৌনে ৫টায় মাঠে শৌচ করতে গিয়েছিলেন গাজু। বিদ্যুতের ওভারহেড তার ঝুলে নীচে নেমে এসেছিল। ছাতার শিক তারে ছুঁয়ে তড়িদাহত হন তিনি। বড়জো়ড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানান।

পুরুলিয়ায় টানা বৃষ্টিতে দেওয়াল পড়ে আহত হয়েছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। রবিবার কাশীপুর থানা এলাকার গামারকুড়ি গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানান। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। রবিবার বৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক থেকে থেকে পড়ে সওয়ারি এক কিশোরী আহত হয়েছেন। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন তার বাবা। ওই কিশোরী মোটরবাইক থেকে একটি খেজুর গাছের ঝোপে পড়ে যায়। তাকে স্থানীয় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।

Bankura Purulia flood relief বাঁকুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy