Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রান্নার দায়িত্ব চেয়ে স্কুলে তালা, ফিরল পড়ুয়ারা

স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসন, স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব চেয়ে সর্বত্রই আবেদন জানিয়েছে গ্রামের মহিলাদের দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কিন্তু কেউই ব্যবস্থা নেয়নি। এই অভিযোগ তুলে দাবি আদায়ে স্কুলে তালা দিলেন দুই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে আদ্রার লালডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩৪
Share: Save:

স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসন, স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব চেয়ে সর্বত্রই আবেদন জানিয়েছে গ্রামের মহিলাদের দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। কিন্তু কেউই ব্যবস্থা নেয়নি। এই অভিযোগ তুলে দাবি আদায়ে স্কুলে তালা দিলেন দুই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে আদ্রার লালডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে অবশ্য স্বনির্ভর দলের কাজকর্ম তদারকির দায়িত্বে থাকা কাশীপুর ব্লকের মহিলা গ্রাম সেবিকা (এলজিএস) স্কুলে গিয়ে গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে তালা খুলেছে। কিন্তু প্রায় ঘণ্টা দুয়েক তালা বন্ধ থাকায় এ দিন আর স্কুলে পড়াশোনা হয়নি। বন্ধ ছিল মিড-ডে মিলও।

কাশীপুর ব্লকের গগনাবাইদ পঞ্চায়েতের লালডাঙ্গা গ্রামের এই প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব চেয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন জানিয়েছে গ্রামের ‘মা কমলা’ ও ‘মা তারা’ নামে দু’টি স্বনির্ভর দল। দল দু’টির দলনেত্রী সোমা মাহাতো ও পূর্ণিমা মুদির দাবি, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব পাওয়ার কথা এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর দলের সদস্যদের। কিন্তু, লালডাঙ্গা স্কুলে প্রথম থেকেই স্বনির্ভর দলের পরিবর্তে দু’জন রান্না করে আসছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন পুরুষ। সোমাদেবীর অভিযোগ, ‘‘দেড় বছর আগে আমাদের দল তৈরি হওয়ার পর থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ, গ্রাম পঞ্চায়েত, বিডিও, অবর স্কুল পরিদর্শক— সকলের কাছেই স্কুলের রান্নার দায়িত্ব স্বনির্ভর দলের হাতে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার কাছেও তাঁরা এ বিষয়ে আবেদন করেছিলেন। বিধায়ক নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের রান্নার দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দেওয়া উচিত বলে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছেন। পূর্ণিমাদেবী বলেন, ‘‘স্বনির্ভর দল তৈরি হওয়ার পরে সেই অর্থে আর্থিক দিক দিয়ে সাবলম্বী হওয়ার জন্য দলের কোনও কাজকর্ম নেই। এই অবস্থায় দলের গরিব সদস্যদের কিছুটা আর্থিক সুরাহা হওয়ার লক্ষ্যেই আমরা বিভিন্ন মহলে আবেদন করেছি। কোনও ফল হয়নি।”

এ দিন সকাল দশটা নাগাদ দু’টি দলের জনা কুড়ি সদস্যা স্কুলের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে সামনে বসে পড়েন। শ’দেড়েক ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে এসেও ফিরে যেতে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এণাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মিড-ডে মিল কারা রান্না করবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষের নেই। এই সিদ্ধান্ত নেয় ব্লক। এ দিন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বিষয়টি জানিয়ে স্কুল খোলার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি। বিষয়টি অবর স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছি।”

স্কুলে তালা দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসন ক্ষুব্ধ। কাশীপুরের বিডিও মানসী ভদ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর ব্লকে এসইউসি-র একটি স্মারকলিপি দিয়ে লালডাঙ্গা স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার দায়িত্ব স্থানীয় স্বনির্ভর দলের সদস্যদের দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিল। আলোচনার পরে তা নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কিন্তু তার তিন দিনের মধ্যেই দাবি আদায়ে তালা দিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। এটা এক ধরনের অপরাধ।” দুই দলনেত্রীর আবার দাবি, সব মহলে আবেদন করার পরে ফল না হওয়ায় বাধ্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে স্কুলে তালা দেওয়া হয়েছে। রান্নার দায়িত্ব দল দু’টিকে দেওয়ার বিষয়ে কী ভাবছে প্রশাসন? বিডিও বলেন, ‘‘স্কুলে রান্নার দায়িত্ব স্বনির্ভর দলগুলি পাওয়ার যোগ্য কিনা, সে বিষয়ে কিছু মাপকাঠি রয়েছে। আমরা সে-সব দিক খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school mid day meal kashipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE