Advertisement
E-Paper

স্কুলে বেনিয়মের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবিতে বিক্ষোভ

ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের টাকা নিয়ে বেনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আগেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। জেলাশাসকের নির্দেশে সর্বশিক্ষা মিশন ঘটনার তদন্ত করে। এ বার তদন্তের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশের দাবিতে এবং ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকদের একাংশ। পাড়া ব্লকের নডিহা হাইস্কুলের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৫
পাড়ার নডিহা হাইস্কুল। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

পাড়ার নডিহা হাইস্কুল। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের টাকা নিয়ে বেনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আগেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। জেলাশাসকের নির্দেশে সর্বশিক্ষা মিশন ঘটনার তদন্ত করে। এ বার তদন্তের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশের দাবিতে এবং ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকদের একাংশ। পাড়া ব্লকের নডিহা হাইস্কুলের ঘটনা।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুলের সামনে বিক্ষোভ চলায় ভিতরে ঢুকতে পারেননি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। তার জেরে বন্ধ রইল স্কুলের এ দিনের পড়াশোনা। পরে নডিহা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বরূপ দে ও পাড়া থানার পুলিশ গিয়ে অভিভাবকদের সাথে আলোচনায় বসে তদন্তের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশের বিষয়ে আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ প্রত্যাহার হয়। সর্বশিক্ষা মিশনের পুরুলিয়া জেলা প্রকল্প আধিকারিক প্রদীপকুমার পতি এ দিন বলেন, ‘‘এ দিনই তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হবে। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া পরবর্তী নির্দেশ মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাড়া ব্লকের এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পোশাক কেনার জন্য টাকা খরচে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগকে সমর্থন জানিয়েছেন স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শচীনাথ মুখোপাধ্যায়। গত ১৫ মার্চ এ ব্যাপারে অভিভাবকদের একাংশ ও কিছু ছাত্রছাত্রী জেলাশাসক,সভাধিপতি-সহ জেলা শিক্ষা দফতর ও সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, অভিযোগ পাওয়ার পরেই সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিককে ঘটনার তদন্ত করতে বলেন জেলাশাসক। সর্বশিক্ষা মিশনের তিন আধিকারিক ও স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে নিয়ে চারজনের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। গত ১ এপ্রিল স্কুলে গিয়ে তাঁরা অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। কিন্তু অভিভাবকদের দাবি, তাঁরা পরিদর্শন করে যাওয়ার পরে দু’সপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হল না। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এই নিয়েই তাঁদের বিক্ষোভ।

ওই অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য তাদের প্রাপ্য অর্থ পায়নি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ খাতায়-কলমে তাদের সেই টাকা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত ছাত্রী, তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্র এবং বিপিএল তালিকায় নাম থাকা ছাত্রদের স্কুলের পোশাক কেনার জন্য মাথাপিছু ৪০০ টাকা দেয় সর্বশিক্ষা মিশন। নডিহা স্কুলের ৭৯৩ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য মোট ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। দু’দফায় সেই টাকা পায় স্কুল।

কিন্তু অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, প্রায় দেড়শো জন ছাত্রছাত্রীকে সেই টাকা দেওয়া হয়নি। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্ত পড়ুয়াকেই পোশাকের টাকা দেওয়া হয়েছে বলে সর্বশিক্ষা মিশন দফতরে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে গৌরাঙ্গ মাজি, ভগীরথ মাহাতো, পীরু রায়দের দাবি, ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে তাঁদের ছেলেমেয়েরা পোশাক তৈরির টাকা না পাওয়ায় শেষে প্রধান শিক্ষিকার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল। তখন প্রধান শিক্ষিকা তাদের জানান, টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ ব্যাপারে ওই অভিভাবকরা স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করতে যান।

স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি এ দিন বলেন, ‘‘অভিভাবকদের কাছ থেকে তাঁদের ছেলেমেয়েদের পোশাকের টাকা না দেওযার ঘটনাটি জানতে পেরে স্কুলে ঘটনাটি নিয়ে খোঁজ নিই। তখন জানতে পারি, সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের টাকা দেওয়া হয়েছে বলে সর্বশিক্ষা মিশনে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা পড়ে গিয়েছে।’’ এরপরেই অভিভাবকরা প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীদের সই জাল করে সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি দাবি করেছেন, ‘‘প্রচুর গোঁজামিল দেখছি। তদন্ত কমিটিকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।” অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষিকা মিতালী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পাল্টা দাবি করেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী পরিচালন সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েই সংশ্লিষ্ট ক্লাসের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের টাকা দেওয়া হয়। সমস্ত পড়ুয়াই টাকা প্রাপ্তির স্বাক্ষর করেছে। সেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সর্বশিক্ষা মিশনে জমা করা হয়েছে। অডিটও হয়ে গিয়েছে। এরপরেও ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘অভিভাবকরা এত জায়গায় অভিযোগ করছেন, কিন্তু আমার কাছে আসছেন না কেন?’’

Agitation school authority corruption Gouranga maji swarup dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy